November 1, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 31st, 2025, 6:06 pm

নাটোরে সুইচগেট বন্ধ রেখে অবৈধ সৌঁতিজালে মাছ শিকার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ায় ১৫টি বিলে ৫হাজার হেক্টোর জমিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের সিংড়ায় গদাই নদীর পাডে প্রভাবশালীদের দখলে বড় শাঐল সুইচগেট বন্ধ রেখে বছরের পর বছর অবৈধ সৌঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করায় এবং সেরকোল মরাগাঙ্গীনা (নদী) নদীর জায়গা দখল করে পুকুর খনন করার পাশাপাশি বাঁধ ও পাকা স্থাপনা করে মাছ করছে একটি স্বার্থন্বেষী ।

এর ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ বছর ধরে তৈরি হয়েছে ১৫টি বিলের ৫ হাজার হেক্টোর আবাদি জমির ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার কারণে উপচেলার সেরকোল, হাতিয়ানদহ,লালোর কলম এ ৪টি ইউনিয়ন এবং সিংড়া পৌরসভার অংশে ৪০টি গ্রামের কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে। শঙ্কায় পড়েছে আসছে বোরো  ও রবিশস্য আবাদও।

স্খানীয়দের অভিযোগ বার বার এমপি মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। অন্যদিকে স্খানীয় প্রশাসনও দিচ্ছেন আশার বানী। চক্রটি নদীর জায়গা ও খাল-জলাশয় দখল করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ভোগ করছেন আর  সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রিপোর্ট

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ ইউনিয়নের বড় শাঐল নামক স্খানে ১৯৯৪-৯৫ সালে পানির শ্রতে গদাই নদী পাড ভেঙ্গে যায়। তৎকালীন  জামায়াতে ইসলামি  সিংড়া ৩ আসনের সাবেক সংসদস সদস্য মরহুম আবুবক্কর সিদ্দিকি মৃত্যু হলে বিএনটি থেকে অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ মাত্র ৯ মাস জন্য এমপি নির্বাচিত হন। ঐ সময় ক্ষতিগ্রস্থ বিস্তৃর্ন এলাকার ফসল রক্ষায় সেরকোল, হাতিয়ানদহ এবং তৎকালিন তাজপুর এ তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে (এডিপি) আর্থিক সহায়তা সারে ৪ লক্ষটাকা ব্যায়ে বড় শাঐল সুইচগেট নির্মান করা হয়। পরে আরও পঞ্চাশ হাজার যুক্ত করা হয়। বর্তমানে ওই সুইচগেটটি স্থানীয় মসজিদ এর নাম ভাঙ্গীয়ে প্রভাবশালীদের দখলে।

প্রতিবছর তারা  ইচ্ছামত সুইচগেট খোলে উপজেলার লালোর, সেরকোল, হাতিয়ানদহ ও কলম চারটি ইউনিয়ন এবং সিংড়া পৌরসভার নিঙ্গইন ও শৈলমারী এলাকায় অন্তঃত ১৫টি বিলে নদীর পানি পবেশ করে। বর্ষা শেষে বড় শাঐল জোলাটির  পানি নিষ্কাশন বন্ধ রেখে সুইচগেটটি মাছ ব্যবসায়ীদের ইজারা দেয়া হয় ১০-১৫ লক্ষ টাকায় । এবছরও প্রায় ৮ লক্ষ টাকা  ইজারা দেয়া  হয়েছে।

গত বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সেরকোল, হাতিয়ানদহ এবং লালোর ইউনিয়নে ১৩টি বিল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিল হচ্ছে রাখশা, ভাষাউড়া, হিয়ালা, মাইস্যাগাড়ী, লক্ষ্মীতলা, পোচাকান্দুরা, খামাইর‌্যাকল, দয়ার বিল, কোমা-কামারের চোরা ও লেলিয়া।

এসব বিলের পারে রয়েছে সেরকোল, শ্রীরামপুর, কংশপুর, হারোবাড়িয়া, সোনাপুর,পমগ্রাম, পুঠিমারী, পাঁচবাড়িয়া, কুশাবাড়ি, খাগোরবাড়িয়া, নতুনপাড়া, বড়শাঐল, পাটশাঐল, বড় বেলঘরিয়া, মাধারিগ্রাম মাঝগ্রামসহ ৪০টি  গ্রাম। বিলের মধ্যে কোথাও এক মানুষ, কোথাও এক বুক পানি। আবার কোথাও হাটু ও মাজা পানি। এর মধ্যে কিছু উচু জমিতে কাঁচা-পাকা ধান বাঁতাশে দুলছে। নৌকা নিয়ে অনেক কৃষক জমি দেখছেন, কবে  তার জমি,থেকে পানি কমবে আর তখন ইরি ধানের বীজতলা তৈরী করবেন তারা। অনেক মাঠ জুরে ঘাষ আর কচুরি পানাতে ভরপুর।

বিলের কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের কষ্টে অর্জিত ফসল এখন পানিতে ভাসছে। অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, তলিয়ে যায় জমির কাঁচা-পাকা ধান।

পুঠিমারী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোক্তার আলী বলেন, ‘বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বর্ষা মৌসমে সারে ১০ বিঘা ধান আবাদ করছিলাম এখন সব ধান পানির নিচে। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই অবস্থা এখন কি খাবো কি নিয়ে আবাদ করবো?

জলাবদ্ধতার কারণে কোনো বছরের পর বছর আমরা ক্ষতিগ্রস্থ।’ একই অবস্থা এলাকার অন্য কৃষক-মুনজেল মোল্লা, কুদরত আলী, ইউসুব আলী, মনোয়ার, আব্দুল শেখ, জোচন মোল্লা, পমগ্রামের রাশেদুল রাশি, শামছুল মাষ্টারসহ, বন্দর আকপাড়া ,মাছপারা ও পাঁচপাড়ার রাজ্জাক, ছোট্ট, অনুকুলসহ অনেক কৃষকের।

অভিযুক্ত সুইচগেট ইজাদার ও স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী খোরশেদসহ অন্যরা বলেন, স্থানীয় মসজিদের কমিটির নিকট থেকে এবার জোলাটি ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা দিয়া (ইজারা) নিছি  বিলের পানির মাছ ধরার জন্য। এসব বিলের পানি বেশি করে ছাইরা দিলে সৌতি জাল টেকে না, ফাইট্যা যায়।

জোলা কমিটির সভাপতি আব্দুল ওহাব মাষ্টার বলছেন, তারা অনেক বছর ধরে জোলাটি মসজিদের নামে ইজারা দেন। এই জায়গা মসজিদকে দান করা হয়েছে ব্যক্তির নামেও আছে। এসব টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাট এবং নদীতে একটা ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। প্লাবন ভূমি ও নদীর তীর কিভাবে মসজিদ বা ব্যক্তি মালিকানা হয় ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই।

এবিষয় সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি জানার পর, তিনি বড় সাঐল সুইচগেট থেকে সৌতি জাল অপসারণ করে পুড়িয়ে দিয়ে আসছেন। তার মতে ওই এলাকায় অন্তঃত ৪-৫ হাজার হে্েক্টার  আবাদি জমি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি  কর্মকর্তা  খন্দকার ফরিদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের দীর্ঘ্য দিন থেকে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যেখানে কিছু অসাধূ লোক আছে তারা বাঁধ ও সুইচগেট দিয়ে পানি আটকে মাছ স্বীকার করছে। এতে লোক উপকৃত হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। আমরা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর এর সমাধানের পথ খুচছি।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, সিংড়া উপজেলা চলনবিল অধ্যশিত এলাকা। এখানে এবার বর্ষায় দীর্ঘ্যদিন পানি অবস্থান করছে, এলকায় বেশ কিছু গ্রামের কৃষক যারা জমিতে আবাদ করেন তাদের জমিতে জলাবদ্ধতায় আছে। বড়-সাঐল গ্রামে সুইচগেট আছে, এটা ব্যক্তিগত উদ্যেশে তারা আটকে রেখেছে আমরা প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোডের্র প্রকৌশলী মোঃ রিফাত করিম জানান, গোদাই নদীতে আমাদের একটি রেগুলেটর রয়েছে, এর বাইরে যদি ওয়াটার কন্ট্রোল টাকচার তা দেখতে হবে। দেখার পরে সেটার কারণে যদি কোন সমস্য হয়ে থাকে, সে বিষয়টি কি করা যায় সেই ব্যবস্থা  গ্রহন করা হবে।