November 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 31st, 2025, 6:18 pm

 ৪০ বছর পর কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীমঙ্গলে পুননির্মাণ হচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরি

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে চার দশক পর ‘শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগার এর পুননির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায়  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো: রেজা-উন-নবী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইসলাম উদ্দিন, পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী মো: ইউসুফ হোসেন খান প্রমুখ। স্থানীয়রা জানান, চল্লিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ লাইব্রেরিটি গত ১৩ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া টানা ৮ বছর ‘উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ কলেজে’ এর নামে পাবলিক লাইব্রেরির ভবনটি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে প্রশাসনিক ও শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে শ্রীমঙ্গল পাবলিক লাইবেরি প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি লাইবেরি বন্ধ রয়েছে। সে সময়ে প্রচুর পরিমাণ বই ও আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো-গোছানো গ্রন্থাগারটি শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বইকেন্দ্রিক প্রাণবন্ত আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই লাইব্রেরিটি ছিল সব বয়সী মানুষের কাছে জ্ঞান অর্জনের অন্যতম এক কেন্দ্র। ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন বিকেল বেলা এ লাইব্রেরিটিতে ভিড় জমাতেন বইপ্রেমিরা। ১৯৮৩ সালের ২২ জুলাই শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কার্যালয়ের একটি টিনশেড কক্ষে ‘শ্রীমঙ্গল গণগ্রন্থাগার’ নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৮৪ সালে শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানভুক্ত দশমিক ১৫ একর জমি গ্রন্থাগারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার পরে সেখানে টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৯৩ সালের টিনশেড ভবনসহ জমি পৌরসভার কাছে লিখিতভাবে হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। সেটাকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা অডিটোরিয়াম কাম লাইব্রেরি’ নামকরণ। জুলাই বিপ্লবের পর উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যানকে মুক্ত করার দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি একাধিকবার মানববন্ধন করে পাবলিক লাইব্ররিটি চালু দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মো: ইসলাম উদ্দিন। শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহিরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বাস্তবায়নে ‘শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মিলনায়ন মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগার’-এর দুই তলা ভবণ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এর নিচতলায় আধুনিক লাইব্রেরি এবং দ্বিতীয় তলায় কফি কর্ণার, বয়স্কদের বিশ্রামাগার ও শিশু-কিশোর পাঠক কেন্দ্র থাকবে। প্রকল্পটির মোট আয়তন তিন হাজার ৯১৯ বর্গফুট। এর মধ্যে নিচতলা ২ হাজার ৮২৫ ফুট স্কয়ার এবং দ্বিতীয় তলা এক হাজার ৮৪ ফুট স্কয়ার বিশিষ্ট। বাজেট ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৮ টাকা। পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিকল্পনা পাঠিয়েছিলাম। অবশেষে প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়। গ্রন্থাগার এবং মিলনায়তনের কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে এবং এটি উপজেলার বই পড়ুয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র ও সিনিয়র সিটিজেনদের বিনোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে কাজ করবে। আশা করছি এর মাধ্যমে মানুষের মেধা মননশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখা যাবে।