রংপুর ব্যুরো:
আদালতের আদেশ ভঙ্গ করায় রংপুরে ডিসি, প্রেসক্লাব প্রশাসকসহ সমাজসেবার তিন কর্মকর্তার কাছে জবাব চেয়েছে আদালত। রবিবার রংপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক কৃষ্ণ কান্ত রায় এ আদেশ দেন। এর আগে ৩০ অক্টোবর প্রেসক্লাবে সদস্য অর্ন্তভূক্তিতে আদালতের আদেশ অমান্য করায় প্রেসক্লাব কমিটির পক্ষে মামলা করা হয়। মামলায় প্রতিপক্ষ করা হয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও প্রেসক্লাব প্রশাসক রমিজ আলম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তাকে। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর আদালত চত্ত্বরে সংবাদ সম্মেলনে করে এ তথ্য জানান প্রেসক্লাব মামলার আইনজীবি অ্যাড. জোবাইদুল ইসলাম ও অ্যাড. মাহে আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবি হারুন অর রশিদ, অ্যাড. মোকছেদ বাহলুল, অ্যাড. রুবাইয়া সুলতানা পপিসহ অন্যরা।
অ্যাড. জোবাইদুল ইসলাম বলেন, রংপুর প্রেসক্লাবে সদস্য অন্তর্ভূক্তি নিয়ে আদালতে থাকা মামলার শুনানী না হওয়া পর্যন্ত ক্লাবের তর্কিত প্রশাসকসহ উভয়পক্ষকে সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জেলা জজের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে রংপুরের ডিসি, প্রেসক্লাবের তর্কিত প্রশাসক আদালতের আদেশকে টয়লেট পেপারের টিস্যুর মত ছুঁড়ে ফেলেছে। তারা মনে করেন প্রশাসনের আন্ডারে আদালত। আমরা আইনজীবি হিসেবে আদালতের প্রতি এমন অবজ্ঞা মেনে নিতে পারি না। এ লক্ষ্যে প্রেসক্লাব কমিটির পক্ষে আমরা একটি ভায়োলেশন কেস ফাইল করেছি। বিজ্ঞ আদালত প্রতিপক্ষ ডিসি, তর্কিত প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আদালত অবমাননার ব্যাখ্যাসহ জবাব চেয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বর্তমান ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল ২০১৪ সালে দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার সাবেক ইউএন থাকাকালীন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রার্থী মনোরঞ্জনশীল গোপালকে বিজয়ী করতে সহযোগিতা করেছে। তিনি বর্তমানে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পূনর্বাসন করতে আইন-আদালত কিছুই মানছেন না। আমরা চাই আইন ভঙ্গকারী ডিসি, প্রেসক্লাবের তর্কিত প্রশাসকসহ সমাজসেবা কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
অ্যাড. মাহে আলম বলেন, রংপুরের সর্বোচ্চ আদালত বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতকে অবমাননা-অবহেলা করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল ও প্রেসক্লাবের তর্কিত প্রশাসক রমিজ আলম। তারা আদালতের নিষেজ্ঞাকে অমান্য করে প্রেসক্লাবের সদস্য অর্ন্তভূক্ত করেছে এবং জেলা প্রশাসক সেই সদস্যের তালিকা তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বুঝিয়ে দিলেন যে আদালত অবমাননার জন্য প্রেসক্লাবের তর্কিত প্রশাসকসহ তিনিও জড়িত রয়েছেন। আমরা এই আদালত অবমাননাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।
অ্যাড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রেসক্লাব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে কোন সরকার বা প্রশাসন এই প্রেসক্লাবে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু জুলাই অভ্যূত্থান পরবর্তী প্রশাসন প্রেসক্লাবের ইস্যুতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। তারা একটি নিবন্ধনকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবে প্রশাসক নিয়োগসহ গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ভুইফোঁড় কিছু সাংবাদিককে সদস্য করা হয়েছে। এই অবৈধ প্রশাসক রমিজ আলম ও জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল নতুন সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতকে তোয়াক্কাই করছেন না।
উল্লেখ্য, প্রেসক্লাব ক্লাবে সাধারণ সদস্যভুক্তি নিয়ে রংপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ মামলা চলমান থাকা অবস্থায় গত ১৪ অক্টোবর প্রেসক্লাব প্রশাসক রমিজ আলম ১০৫ জনকে প্রেসক্লাবে সাধারণ সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করেন। বিতর্কিতরা এতে সদস্য হওয়ায় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন
রংপুর-১ আসনে মোকাররম হোসেন সুজনকে মনোনীত করায় ঐক্যবদ্ধভাবে উৎফুল্ল বিএনপি নেতাকর্মী
কুড়িগ্রামে দুই ফার্মেসিকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা
সুন্দরবনের দুবলার চরে ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করেছে কোস্ট গার্ড