November 5, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 4th, 2025, 7:13 pm

নিবন্ধনকৃত সারে ১৫ লক্ষ গত বছরের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে

নাটোর প্রতিনিধি:

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে সেবার পরিধি  দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাটোর ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি গত বছরের ৯ মাসের চেয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে  যেমন, বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। তেমনি বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয় । হাসপাতালে অভ্যন্তরে পরিছন্নতা ও  খাবার সরবারাহের অভাব এবং টিকিট  কাউন্টার ও ঔষধ  প্রাপ্তিতে বিশেষ করে নারীদের ভোগান্তি লক্ষ করা গেছে। এছারা হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক এর মধ্যে ২৮ চিকিৎসক  এর পদ ফাঁকা  এবং ৬৩টি পদে লোকবল নেই। এর ফলে প্রতিদিন শত শত রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এবং অনেককে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। তবে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে  ভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ এর কথা বলছেন।

নাটোর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল কার্য্যলয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে মোট রয়েছে ২৬৫টি এর মধ্যে কর্মরত ১৬৪ জন এবং পদ শূন্য রয়েছে ১০১টি। এ হাসপাতালটি পূর্বে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছিল, যা পরে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ৯ অক্টোবর মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাসপাতালের দায়িত্ব বুঝে নেয়া হয়। পরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে হাসপাতালে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২৫ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৯ জন। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।  গত বছরে সেপ্টেম্বর  মাস পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে সরকারি রাজস্ব আদায়  হয়েছে ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫১ টাকা। এ বছর একই সময়ে রাজস্ব রেবে দারিয়েছে এক কোটি ছয় লাখ ৫৪ হাজার ৮২৭ টাকা। অর্থাৎ  গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আয় বেড়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালে প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবস্থাপনায় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সময়সীমা বৃদ্ধি করে ইভিনিং শিফট চালু করা করায় জনসাধারণ সেবা গ্রহণে উৎসাহী হচ্ছেন। আগে প্যাথলজি পরীক্ষার সময় বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত থাকলেও বর্তমানে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে এবং রাত আটটা পর্যন্ত বিল কাউন্টার খোলা রাখা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি চালু করা হয়েছে। কার্ড্রোলজি, নেপ্রলজি, নিউরোলজি এবং প্যাথলোজিষ্ট কন্স্যাল্টসহ গুরুত্বপূর্ন পদে লোকবল না থাকায় শতশত রুগী প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপালের সহকারী প্যাথলজিস্ট আল আমিন বলেন,  ইলেকট্রোলাইটিস, বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার একটির সঙ্গে নতুন আরও দুটি এবং সেল কাউন্টার একটির সঙ্গে আরও একটি সংযোজন করা হয়েছে। রি-এজেন্টের সরবরাহ পেলে অতি দ্রুত হরমোন পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে ।

স্থানীয় সেবা গ্রহীতা নাজমা বেগম জানান, আরবিসি, সিবিসি, ইউরিন, আরএমই, উইডাল ক্রিয়েটেনিন পরীক্ষা করালাম। ই-রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। অন্য  রিপোর্টের আগামীকাল নিতে বলছেন  এ রিপোর্টের উপর শতভাগ ভরসা আছে ।

শাহনাজ খাতুন বলেন, হাসপাতালের ভালো ভালো ডাক্তার আছেন, কিন্তু যথা সময় টিকিটি পাই না অনেক ভীর এবং লম্বা লাইনে  দাড়িয়ে শত শত রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এবং অনেককে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।

অপরজন হাসপাতালে ভর্তি রুগী (নারী) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, গত ৫-৭দিন থেকে ভর্তি আছি কিন্তু পরিছন্ন কর্মিকে পরিষ্কার করতে দেখিনা। আসলেও কোনমতে তারা সামনের অংশে পরিষ্কার করে নতুন ভবনে আরও কম  পরিষ্কার করা হয়। আবার ভর্তি রুগীদের সবাই হাসপাতালের খাবার পায় না ।

নাটোর ২৫০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৩০-১৫০টি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের এই সংখ্যা বেড়ে হয় ছয় লাখ ৪৯ হাজার। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মহিলা ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড নতুন ভবনে সুপরিসর স্থানে স্থানান্তর করায় সেবার মান উন্নয়ন হয়েছে। কোভিড-১৯সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগীর জন্য নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভবনে চারটি কেবিনসহ মোট ছয়টি কেবিনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্টমাক ওয়াশ রুম তৈরি করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের জন্য পৃথকভাবে জরুরি টিকিট কাউন্টার চালুর পাশাপাশি চারটি বেড সংযোজন করে জরুরি পর্যবেক্ষণ কক্ষও স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া সার্বক্ষণিক কাজ করছে হেল্প ডেস্ক থাকছে। জরায়ু ক্যান্সার শনাক্তকরণে কলকসকোপি চালু করা হয়েছে। অচল এ্যাম্বুলেন্স সচল হয়েছে। অভিভাবকবৃন্দের অপেক্ষমান পরিসরসহ ইপিআই টিকাদান কক্ষ চালু করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, জুলাইযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ এবং গুরুতর অসুস্থ্য ব্যক্তিদের জন্য এক্সপ্রেস কাউন্টার কাজ করছে। অপারেশন থিয়েটার, ফার্মেসি, এনসিডিসি কর্নারের কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে।

অটোমেশন কার্যক্রমের সিস্টেম সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মোশাররফ জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মরত ব্যক্তিদের অটোমেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ চলমান আছে। টিকেট কাউন্টার ও বিল কাউন্টারে ই-টিকেট, এনসিডিসি কর্নার ও ডেন্টাল বিভাগে ই-প্রেসক্রিপশন, প্যাথলজিতে ই-রিপোর্ট এবং ফার্মেসি ও অপারেশন থিয়েটারের ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের সকল কার্যক্রমকে শতভাগ অটোমেশনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫০ জন রোগীর অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রথম শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৬১ থাকলেও ১৯ জন চিকিৎসকসহ ২৯টি পদ শূন্য আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীসহ সর্বমোট ২৬৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৫৬ জন। মোট শূন্য পদের সংখ্যা ১০৯ টি।

নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহরাব আলী সম্রাট জানান, বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগমে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি আমরা। অটোমেশন ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার পরিবর্তন করে স্থানীয়ভাবে দ্রুতগতির সফটওয়্যার সংযোজন করতে যাচ্ছি। এতে কাজে গতি আসবে, রোগীরা লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন।

নাটোরের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মুক্তাদির আরেফীন বলেন, শুধু সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, সেবার মান বৃদ্ধিতেও আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালের শূন্য পদ পূরণে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি, শিগগির শূন্য পদ পূরণ করে হৃদরোগ, কিডনিসহ অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে নাটোরবাসীকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালটি পূর্বে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছিল, যা পরে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতির পর এই হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাসপাতালটি বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবলের অভাব থাকায় এটি পুরোপুরি সেবা দিতে পারছে না। নাটোর সদর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠার সঠিক সালটি খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে নাটোর মহকুমা ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা স্থাপিত হয়। হাসপাতালটি সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে কোনো এক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় যখন এটি একটি স্বাস্থ্যকর এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল।