ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় কালমেগির প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপত্তার কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, টাইফুন মঙ্গলবার ভোরের দিকে আঘাত হানা শুরু করে এবং বুধবারও এর তাণ্ডব অব্যাহত থাকে। সেবুতে বন্যার তোড়ে গাড়ি, ট্রাক এবং কনটেইনার ভেসে যাচ্ছে। সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো জানিয়েছেন, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।
সেবু সিটির আশেপাশের অঞ্চলে কালমেগির আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৮৩ মিলিমিটার (৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা মাসিক গড় ১৩১ মিলিমিটারের চেয়ে অনেক বেশি। প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেন, আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে, কিন্তু প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হলো পানি। বন্যার কারণে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা জানান, সেবু সিটিতে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনও পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও, লেইতে প্রদেশে এক বৃদ্ধ এবং বোহলে গাছ চাপায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সেবু সিটির বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, “পানি খুব দ্রুত বাড়ছিল। ভোর ৪টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। ২৮ বছর ধরে এখানে থাকি, এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু দেখিনি।”
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী হচ্ছে। উষ্ণ মহাসাগর ও আর্দ্র বায়ুমণ্ডল ভারি বৃষ্টিপাত বাড়াচ্ছে। সেবুর তথ্য কর্মকর্তা রন রামোস জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরের ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁবু থেকে সরানো হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো জানিয়েছেন, ঝড়ের সম্ভাব্য পথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার সময় উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উড়োজাহাজে কেউ জীবিত আছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।
টাইফুন কালমেগি বর্তমানে ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলের ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বইছে, এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটারে পৌঁছাচ্ছে। এ কারণে অনেক এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রতি বছর প্রায় ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে, যা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাসকারী মানুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চারম্যান ভারিলা বলেছেন, টাইফুন কালমেগি মধ্য দিয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বার্ষিক গড় সংখ্যায় পৌঁছেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৩–৫টি ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরেও ফিলিপাইন দুটি শক্তিশালী ঝড়ের কবলে পড়েছিল, যার একটি সুপার টাইফুন রাগাসা। রাগাসার আঘাত প্রতিবেশী তাইওয়ানকেও পৌঁছেছিল, যেখানে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন দুর্ঘটনা হয় : তদন্ত প্রতিদেন প্রকাশ
৫ শরিয়াহ ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রংপুরে রিটা রহমানকে নমিনেশনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন