November 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 6th, 2025, 4:00 pm

অর্থ উপদেষ্টা-গভর্নর পদত্যাগ না করলে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও

 

একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে আজ (৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে মানববন্ধন করেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একাংশ। এ কর্মসূচি আয়োজন করে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

মানববন্ধন থেকে আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা পদত্যাগ না করলে আগামী মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও করা হবে।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী, সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজাদ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইশতেয়াক।

মানববন্ধন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেন তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্জার প্রক্রিয়া বন্ধ করেন। বক্তারা বলেন, ব্যাংকগুলো একীভূত করার যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত আগামী ফেব্রুয়ারির পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। দুই দিনের এই সরকার যদি শেয়ারহোল্ডারদের ধ্বংস করে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পুঁজিবাজারে আর বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরবে না— যত প্রণোদনাই দেওয়া হোক না কেন।

সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়। এসব ব্যাংককে ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার আগেই উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। এখন যাদের হাতে শেয়ার রয়েছে তারা মূলত সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী— যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাজীবনের জন্য পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার অল্প সময়ের জন্য গঠিত হয়েছে। তারা যদি এমন বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তার ভোগান্তি পরবর্তী সরকারগুলোকেও পোহাতে হবে। আমরা চাই, সরকার অবিলম্বে এই মার্জার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক।

তিনি আরও বলেন, পাঁচ ব্যাংকের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর শেয়ার শূন্য ঘোষণা করায় আমরা অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি। যদি তারা শনিবার রাত ১২টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় সারাদেশের আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও করব। অনেক আমানতকারী ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাইলে রোববারই কর্মসূচি দিতে পারতাম, তবে সারাদেশের বিচ্ছিন্ন বিনিয়োগকারীদের যুক্ত করতে সময় নিচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী মঙ্গলবারের আন্দোলন ২০১০ সালের পুঁজিবাজার আন্দোলনকেও ছাড়িয়ে যাবে।

এর আগে সকালে ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ঘোষণা দেয়, পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।

স্থগিত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

ডিএসই জানিয়েছে, ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, এখন থেকে এই ব্যাংকগুলো উক্ত অধ্যাদেশের আওতায় পরিচালিত হবে এবং তাদের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। তাই শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

ব্যাংকগুলোর সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা কাঠামো

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: পরিশোধিত মূলধন ১,২০৮ কোটি টাকা; সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ ৬৫% এর বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি ২৯%, উদ্যোক্তা ও পরিচালক ৬%।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: মূলধন ৯৮৭ কোটি টাকা; সাধারণ বিনিয়োগকারী ৩২%, প্রাতিষ্ঠানিক ৫৩%, উদ্যোক্তা ১৫%।

ইউনিয়ন ব্যাংক: মূলধন ১,০৩৬ কোটি টাকা; সাধারণ বিনিয়োগকারী ৩২%, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি ১৪%, উদ্যোক্তা ও পরিচালক ৫৪%।

এক্সিম ব্যাংক: মূলধন ১,৪৪৮ কোটি টাকা; সাধারণ বিনিয়োগকারী ৩৯%, প্রাতিষ্ঠানিক ২৯%, উদ্যোক্তা ও পরিচালক ৩২%।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল): মূলধন ১,১৪০ কোটি টাকা; সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৯%, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি ৬৯%, উদ্যোক্তা ও পরিচালক ১২%।

এনএনবাংলা/