ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এটিই সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অংকের অর্থ আত্মসাতের মামলা বলে জানিয়েছে দুদক।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান সংস্থার ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ এ মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ঘটে।
২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২,৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৮০০ কোটি টাকা করে, যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়—এটি ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণসীমা নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অপ্রতুল জামানত (মাত্র ৪০–৭০%) ও দুর্বল আর্থিক অবস্থার পরও এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির নামে বিপুল ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় আইসিআরআরএস স্কোর ৫০ শতাংশের নিচে থাকা সত্ত্বেও ঋণ নবায়ন ও বৃদ্ধি করা হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপন্থী।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, এস আলম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাসনে নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়ে সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়িয়ে ও মেয়াদ পরিবর্তন করে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করেন।
১৩৪টি ভুয়া বা নামমাত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ৯,২৮৩.৯৩ কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হয়, যেমন—সোনালী ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, এস এস পাওয়ার, এস আলম স্টিলস, এস আলম সিমেন্ট, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ইত্যাদি।
২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৩৭ কোটি টাকা স্থানান্তরের পরদিনই রূপালী ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখার মাধ্যমে প্রায় ২৩.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৯০ কোটি টাকা) সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার–১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
দুদক বলছে, এই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সফটওয়্যার কারসাজি করে ইসলামী ব্যাংকের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন।
বর্তমানে সুদ-আসলে ওই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০,৪৭৯.৬২ কোটি টাকা।
এটি দুদকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ আত্মসাত ও অর্থপাচারের মামলা, বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ফিলিস্তিনি গ্রামবাসী ও সাংবাদিক আহত
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ময়মনসিংহে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০
হাসিনাসহ রেহানা পরিবারের তিন মামলায় আরও ২২ জনের সাক্ষ্য