November 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 13th, 2025, 2:24 pm

ফ্যাসিস্ট হাসিনার মামলার রায় ১৭ নভেম্বর

জুলাই হত্যাযজ্ঞের মামলায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের রায় প্রদান করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণার এ তারিখ নির্ধারণ করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, তিনি আশা করছেন রায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড হবে। তবে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আদালতই নেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ দেশ-বিদেশে এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। তারা নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, কিন্তু বিচার তার নিজস্ব গতিতেই চলছে— স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। নতুনভাবে গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়, যেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

প্রথমে মামলায় একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। পরে ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে যুক্ত করার আবেদন করে, যা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করে।

প্রসিকিউশন এ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকা সংযুক্ত থাকে।

এর ভিত্তিতে ১ জুন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয় এবং ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে।

পরবর্তীতে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে। পরে তিনি সাক্ষ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষে।

গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই দাবি জানান। অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দুই আসামির খালাস প্রার্থনা করেন।

সবশেষে ট্রাইব্যুনাল জানায়, রায় ঘোষণার তারিখ ১৩ নভেম্বর জানানো হবে— যা পরবর্তীতে ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

মামলার অভিযোগসমূহ

প্রথম অভিযোগ:

গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে তার প্ররোচনা ও তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক হামলা চালায়, যাতে দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।

দ্বিতীয় অভিযোগ:

শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। পরে শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড থেকে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের প্রমাণ মেলে।

তৃতীয় অভিযোগ:

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগ:

রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগ:

আশুলিয়ায় ছয়জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার দায়েও শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এনএনবাংলা/