November 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 13th, 2025, 6:42 pm

অযত্ন আর অবহেলায় হারাতে বসেছে হেমনগর জমিদার বাড়ির জৌলুস

টাঙ্গাইল :

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হেমনগর জমিদার বাড়ি—যা স্থানীয়ভাবে ‘পরীর দালান’ নামে পরিচিত—অযত্ন ও অবহেলায় হারাতে বসেছে। ১৮৯০ সালে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী নির্মাণ করেছিলেন এই প্রাসাদোপম স্থাপনাটি।

রাজনীতি, সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই জমিদারবাড়ি। শতাধিক কক্ষবিশিষ্ট ভবনটিতে একসময় চলত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, জমকালো দরবার আর অতিথিদের আনাগোনা। দিল্লি ও কলকাতার কারিগর ও রাজমিস্ত্রিদের হাতে গড়া ইটসুরকির এই স্থাপনাটি ছিল এক অনন্য শিল্পকর্ম।

কালের বিবর্তনে এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি। দালান ভেঙে পড়ছে, নেই দরজা-জানালা। চারপাশে ভুতুড়ে নীরবতা। অযত্ন ও অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার জমিদারি ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই জমিদারবাড়ি দেখতে আসত। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই ঐতিহ্য। তাদের দাবি, সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা গেলে এটি দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

১৯৭৯ সালে জমিদারবাড়ির মূল ভবনটি ডিগ্রি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি হেমনগর ডিগ্রি কলেজ নামে পরিচালিত হচ্ছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মেহের মাকসুদ বলেন, “এই ভবন একসময় জমিদারবাড়ি ছিল, এখন এটি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। তবে ভবনের পুরোনো অংশগুলোর দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।”

দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা হেমনগর জমিদারবাড়ির সংরক্ষণে ২০২০ সালে উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে এই প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, “হেমনগর জমিদারবাড়ি সংরক্ষণের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই সংরক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

স্থানীয়রা আশা করছেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এই জমিদারবাড়ি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবেই নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।