রাজধানীর আলোচিত বেসরকারি হাসপাতাল আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৩,৪৬৪ কোটি টাকা, যার বড় অংশই বর্তমানে খেলাপি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান, যিনি একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি ছিলেন, তিনি অবৈধ ঋণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে হয়েছেন বিতর্কিত।
২০১০ সালের আগ পর্যন্তও আনোয়ার হোসেন খান নিজেকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু এরপর তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন আনোয়ার হোসেন খান। যদিও শুরুতে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন থেকে।
ঋণখেলাপি আনোয়ার হোসেনকে খুঁজে না পাওয়ায় ব্যাংকগুলো বন্ধকিপ্রাপ্ত সম্পত্তি নিলামে তোলার চেষ্টা করছে, তবে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৯৫০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির কাছে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, এছাড়া যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এবি ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কিছু ব্যাংক এবং এক ডজনের বেশি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনোয়ার হোসেন নিজের নামে থাকা কোম্পানির পাশাপাশি স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামেও ঋণ নিয়েছেন, যার একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে। তবে দেশে তার ধনসম্পদ বেশিরভাগই জমি ও বাড়ি, যার মধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডিতে রয়েছে ২০টির বেশি বাড়ি।

আনোয়ার হোসেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান ছিলেন, তবে ঋণখেলাপির কারণে পদ থেকে সরানো হয়েছে। এছাড়া তিনি এসবিএসি ব্যাংকেরও পরিচালক ছিলেন, যার শেয়ারও বিক্রি করেছেন। এর আগে দেউলিয়া হওয়া ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের উদ্যোক্তা হিসেবেও তার নাম আছে।
সম্প্রতি যমুনা ব্যাংক ধনমন্ডির জমি ও হাসপাতাল নিলামে তোলার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তবে ব্যাংকটি আশা করছে না ১০০ কোটি টাকারও বেশি আদায় করা যাবে।
হাসপাতালটির অবস্থা প্রায় সংকটাপন্ন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভালো ডাক্তারদের আনার জন্য বাড়তি অর্থ দেওয়া হচ্ছে, এবং বর্তমানে রোগীরা প্রধানত এই ডাক্তারদের মাধ্যমে হাসপাতালে আসছেন। আনোয়ার হোসেন নিজে রাত ১০টার পর গোপনে হাসপাতালে আসেন, তবে তিনি জনসমাগম এড়িয়ে চলেন এবং ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি শতকের শুরুর দিকে আনোয়ার হোসেন ফকিরাপুলে ছোট একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি চালাতেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল, এবং ২০০৮ সালে মেডিকেল কলেজ। ২০১০ সালের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ উত্তোলন করেন। ঋণের একটি অংশ শেয়ারবাজার কারসাজি ও বিদেশে পাচার হয়েছে, বাকি অংশ দেশে জমি ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর তার ঋণগ্রহণ ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড আরও বেপরোয়া হয়, নিজেকে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ছেলে’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সময় তিনি প্রভাবশালী নেতা শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম ব্যবহার করতেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
দিল্লি যাচ্ছেন খলিলুর রহমান, অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা
হাসিনার উল্টো সুর, বলছে ‘পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত নেই’
নিরাপত্তা শঙ্কায় বাতিল হলো ‘নবান্ন উৎসব’