বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই ‘মব ভায়োলেন্স’ বা জনতার সহিংসতার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এখন এক ধরনের ট্রানজিশনাল পর্বে আছি। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে, যদিও শিডিউল এখনো প্রকাশ হয়নি—তবে আশা করছি শিগগিরই হবে। নির্বাচনই সবকিছুর শেষ নয়; নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পুনর্গঠনই বড় চ্যালেঞ্জ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো ভিন্নমতকে সহ্য করার মানসিকতা। আমি কথা বলব, আপনার বক্তব্য সহ্য করতে না পেরে যদি আপনাকে আক্রমণ করি, জনতাকে উত্তেজিত করে সহিংসতা ছড়াই—এটা কোনোভাবেই গণতন্ত্র হতে পারে না। প্রকৃত গণতন্ত্র হলো—আমি আপনার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু আপনার মত প্রকাশের অধিকারের সুরক্ষায় নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশকে স্থিতিশীল পথে রাখতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। কে জিতল বা হারল—এটা বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিচার বিভাগ স্বাধীন কি না, মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কি না, সংসদ কার্যকর কি না, রাষ্ট্রে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত কি না, নাগরিক মর্যাদা ও মানবাধিকার টিকে আছে কি না—এসব প্রশ্নের উত্তরই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
গণতন্ত্রের পক্ষে মোর্চা গঠনের আহ্বান
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ওপর দায়িত্ব আরও বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপিকে এমন একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তুলতে হবে, যারা অতীতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এবং ভবিষ্যতেও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সংগ্রাম করবে।
রায়ের গুরুত্ব খর্বে একটি মহলের অপচেষ্টা
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতা বিরোধী অপরাধের” রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মব ভায়োলেন্স উসকে দিয়েছে। তার ভাষায়, একদিকে রায় ঘোষিত হচ্ছে, অন্যদিকে মবক্রেসি চলছে—এর পেছনে কী উদ্দেশ্য তা ভেবে দেখতে হবে। আমি মনে করি, একটি বিশেষ মহল কৌশলে পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইছে এবং বিভক্তি সৃষ্টি করছে।
বিএনপি বিপ্লবী দল নয়, লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টি
তিনি আরও বলেন,বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। এটি একটি লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান করাই আমাদের নীতি, আর সেই লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষও শত শত বছর ধরে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছে।
আলোচনা সভায় অন্যদের অংশগ্রহণ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গ্রন্থের সম্পাদক বাবুল তালুকদার ও প্রকাশক অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
প্রচারণায় তারেক রহমান-সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ার ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানালো এনসিপি
৩ ট্রলারসহ ১৬ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা