November 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 23rd, 2025, 5:52 pm

বড় ভূমিকম্পের শঙ্কায় দেশজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে

ছবি: মঈন আহমেদ

 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিনে একাধিকবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক কম্পনের ধারাবাহিকতা, দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূ–ফাটল রেখার নড়াচড়া এবং বিশেষজ্ঞদের জোরালো সতর্কবার্তা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছেন ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ভূ-টেকটোনিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বাংলাদেশ তিনটি বৃহৎ টেকটোনিক প্লেট—ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্লেট আটকে থাকায় বিপুল পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে। প্লেটগুলো খুলে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, যে কোনো সময় এর চাপ হঠাৎ মুক্তি পেয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৬ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিচে একটি গোপন “মেগাথ্রাস্ট ফল্ট” রয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটাতে সক্ষম। বিশাল পললস্তরের নিচে লুকানো এই ফল্ট দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা থেকে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বুয়েট, রাজউক ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় নতুন শঙ্কা

সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতীয় প্লেট প্রতিনিয়ত পূর্বদিকে সরে যাচ্ছে, আর সেই চাপ বাংলাদেশ–মিয়ানমার অঞ্চলে জমা হচ্ছে। এই অস্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধি বাংলাদেশকে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ চাপ হঠাৎ মুক্তি পেলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি অনিবার্য।

রাজধানীর পুরান ঢাকার অনেক বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ। বড় কোনো ভূমিকম্পে ঘনবসতির এ এলাকাগুলোর পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। ছবি: মঈন আহমেদ

ঢাকা শহর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে

ঘনবসতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অনুমোদনবিহীন বহুতল ভবন—সব মিলিয়ে ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ভয়াবহভাবে অরক্ষিত। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “ঢাকার ঘরবাড়িগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অধিকাংশ ভবনই ঠিকমতো তদারকি হয়নি। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে পুরো ঢাকা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”

তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের কম্পন ৫.৭ মাত্রার চেয়ে বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে সুনিশ্চিত করে কিছু বলার জন্য আরও সময় ও তথ্য প্রয়োজন। তার মতে, দেশে ভূমিকম্প–প্রস্তুতির অভাবই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।

১৭৬২ সালের ভয়াবহ কম্পনের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা জানান, কক্সবাজার–মিয়ানমার অঞ্চলের সক্রিয় ফল্ট ১৭৬২ সালে শক্তি ছেড়ে দিয়েছিল। এতে ৮.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, যার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উঁচু হয়ে যায় এবং বঙ্গোপসাগরে সুনামি সৃষ্টি হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে সেই অঞ্চলে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে।

হিমালয় অঞ্চলের প্লেট নড়াচড়ায় নতুন সতর্কবার্তা

সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, হিমালয়ের নিচে থাকা টেকটোনিক প্লেট অস্বাভাবিকভাবে সরে যাচ্ছে। এ গবেষণা প্রকাশের একদিন পরই বাংলাদেশে ৫.৭ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামনে আরও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে।

ঢাকা শহরের অনিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছবি: মঈন আহমেদ

আরও গবেষণা প্রয়োজন — কিন্তু সময় কমছে

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল অঞ্চলে অবস্থিত। তাই বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আরও গবেষণা প্রয়োজন হলেও, জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ না করলে ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে।

এনএনবাংলা/