দেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা জীবাণুর ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল এএমআর সার্ভেলেন্স রিপোর্ট-২০২৫’ বলছে, দেশের আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হচ্ছে না। সব নমুনার মধ্যে ৭ শতাংশে পাওয়া গেছে প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর) জীবাণু, যেখানে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করে না।
১ বছরে ৯৬ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ৯৬,৪৭৭টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। পাঁচটি আইসিইউতে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যাচাই করে দেখা যায়— পিডিআর জীবাণু সব নমুনায় ৭%, আইসিইউতে ৪১%, মাল্টি-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর) জীবাণু সব নমুনায় ৪৬%, আইসিইউতে ৮৯%। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হার বিশ্ব মানের তুলনায় অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকই রেজিস্ট্যান্সের মূল কারণ
আইইডিসিআর জানায়, দেশে অ্যান্টিবায়োটিক অপপ্রয়োগ ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে জীবাণু ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ফলে অনেক সংক্রমণে প্রচলিত ওষুধ আর কাজে লাগছে না। ডব্লিউএইচওর শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার ৭৭% থেকে বেড়ে ৯০.৯%-এ উঠেছে।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক হলো—সেফট্রিয়াক্সোন (৩৩%) এবং মেরোপেনেম (১৬%)। এ ছাড়া সেফিক্সিম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, আজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজলসহ আরও অন্তত ১০টি ওষুধ দেশে অত্যধিক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি বন্ধের আহ্বান
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন— “ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অনেকেই দোকানের কর্মী বা অবৈধ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নেন—এটাই রেজিস্ট্যান্সের প্রধান কারণ।”
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব বলেন— “যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াই জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এএমআর এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় সংকট। সেভ অ্যান্টিবায়োটিক, সেভ ইয়োরসেলফ।”
ঢাকায় ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭%
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়— দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭% ব্যবহৃত হয় ঢাকায়। এরপর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে উচ্চ ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (ইউটিআই) ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার খুব বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আইইডিসিআরের সতর্কবার্তা: এখনই নিয়ন্ত্রণ না আনলে ভয়াবহ বিপর্যয়
আইইডিসিআর জানায়—অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই বিক্রি, পশুপালনে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এ সংকটকে দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ জ্বর-সংক্রমণও আগামীতে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
নাসা গ্রুপের নজরুলের আরও ৪৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের নির্দেশ
রাজধানীতে ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে: রাজউক চেয়ারম্যান
মেট্রোরেলের কার্ড অনলাইন রিচার্জ চালু হচ্ছে মঙ্গলবার