লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবির অর্থায়নে লক্ষ্মীপুরে চলমান টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ প্রকল্পে বেপরোয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে জনসাস্থ প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুয়া নাম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নামে কাজ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক ঠিকাদার নিয়োগ না করে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মহলের ইচ্ছামতো কাজ ভাগ করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
জানা যায়, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে মাত্র কয়েকটি নামমাত্র ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সামান্য কাজ দেওয়া হলেও, অধিকাংশ কাজ দেওয়া হয়েছে বুয়া নাম, অবসরপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ পরিচিত ব্যক্তিদের নামে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, কাজের প্রকৃত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আড়ালে-আবডালে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে কিছু সুবিধাভোগী মহলের মধ্যে।
২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় মোট ৯ হাজার ৩৮৯টি ল্যাট্রিন নির্মাণের কথা। এর মধ্যে সদরের ২১টি ইউনিয়নে ৪৮০৯টি, রায়পুরের ১০টি ইউনিয়নে ২২৯০টি এবং রামগঞ্জের ১০টি ইউনিয়নে ২২৯০টি ল্যাট্রিন নির্মাণ হচ্ছে। এসব টয়লেট বরাদ্দে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সহায়তায় এনজিও ‘জেভি-৩ ড্রপ অ্যান্ড ওয়াটার এইড’-এর প্রতিনিধি দ্বারা উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, অসমাপ্ত টয়লেট নির্মাণ, নগদ টাকা লেনদেন এবং কাজের বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কাগজে কলমে বরাদ্দ দেখানো হলেও বাস্তবে সেসব পরিবার টয়লেট পাননি।
লক্ষ্মীপুরে দুই সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে জনস্বাস্থ্যের সহকারী প্রকৌশলীর বাঁধা এমন সংবাদ প্রচার করে দৈনিক সকালবেলা ও দৈনিক জবাবদিহি লেখা হয় কমলনগর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাকিব এর বিরুদ্ধে ফাইল প্রসেসিং এর নামে ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট বেলালকে দিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ বিষয় নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বক্তব্য নিতে গেলে রায়পুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন বক্তব্য দিতে বাঁধা দেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উলটো সাংবাদিকদের সাথে বাকবিতন্ডায় শুরু করেন একপর্যায়ে তিনি তার নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা না শুনে চলে যায়। এছাড়া রায়পুরে উপজেলায় রমিজ উদ্দিন বিরুদ্ধে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে ঠিকাদারের সঙ্গে অনিয়মে জড়িত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারাও। অনিয়মের অভিযোগ তুলে রায়পুর ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডে ল্যাট্রিন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ইউপি সদস্য ও সুবিধাভোগীরা এমন সংবাদ কয়েকদিন আগে দৈনিক যুগান্তরে প্রচার হয়। এ সকল কর্মকান্ডের পরেও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি।
এদিকে বিলকিস আক্তার লক্ষ্মীপুরে যোগদানের আগে গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এরপরও তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
তারা মনে করছেন, এমন কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ না হলে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
এমন একাধিক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে জড়িত থাকলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আক্তার নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন, সবকিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে, অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক। তবে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, বারবার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের নীরবতা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, নইলে হতদরিদ্রদের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি অর্থায়িত এই প্রকল্প দুর্নীতির কারণে কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন
কোনো কারণেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশ আবার ফ্যাসিস্ট মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে : আজিজুল বারী হেলাল
পীরগঞ্জে সুধীজনদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়
কুলাউড়ায় কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ