মাসুম বিল্লাহ ইমরান:
আবারো আলোচনায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি)। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক এক্সপার্ট সদস্য রাখেননি। এছাড়া বর্তমান ভিসি তার পুরোন শিক্ষার্থীদেরকে নিয়োগে এবং সুযোগ সুবিধায় প্রাধান্য দিচ্ছেন। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদেরকে প্রতিষ্ঠিত করছেন শিক্ষাঙ্গনের বিভিন্ন পদে। নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি একই নীতি অনুসরণ করছেন।
কর্মকর্তা (৩য় গ্রেডে) নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা দেখা হয়নি। যেমন- পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখায় (৫ম গ্রেডে) কর্মরত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সহিদ আলীকে। ৫ আগস্টের পর তাকে প্রিভেন্টিভ শাখায় ট্রান্সফার করা হয় শাস্তি হিসেবে অর্থাৎ ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে ক্যাম্পাস পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শাখায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, তার নিকট আত্নীয় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলে যোগদান করার পরে তার সুপারিশে তাকে পরিবহন শাখায় (৫ম গ্রেড) ট্রান্সফার করা হয়। সেখান থেকে তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার হিসেবে নিয়োগ আবেদন করেন। মোহাম্মদ সহিদ আলী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত আওয়ামী লীগ সমমনা সংগঠন গণতান্ত্রিক অফিসার পরিষদের ২০২৩ সালের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে গণতান্ত্রিক অফিসার পরিষদ থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল, সমাবেশ, বক্তৃতা করেছেন। ২৪ এর গণঅভ্যাত্থানের ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করেছেন। শিক্ষাঙ্গণে করেছেন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন। ৩৫ জুলাই খুনি হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে “শান্তি সমাবেশে” করেছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সন্ত্রাসী, অরাজকতা সৃষ্টিকারী, দেশ বিরোধী ইত্যাদি উল্লেখ করে তাদের অভিশাপ দিয়েছিলেন, স্বৈরাচার হাসিনাকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করার আহবান করেছিলেন। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির কাছ থেকে সহিদ আলী আওয়ামী পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ উজ্জীবিত উল্লেখ করে তার সন্তানের চাকুরীর জন্য সুরারিশ গ্রহণ করেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে মোহাম্মদ সহিদ আলী নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় খুকৃবিতে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সিকৃবি সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে সহিদ আলী সিকৃবিতে সহকারি রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করলেও তার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্যজনকে সহকারি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের অনুসারী ভিসি প্রফেসর ড. মো: আবদুল আউয়াল ও রেজিস্ট্রার ডা: মো: জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার যোগসাজশে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার সহিদ আলী। নিয়োগ পাওয়ার পর নিজ এলাকার ভিসি ও রেজিস্ট্রারের দাপটে আওয়ামী লীগের কান্ডারী বনে যান সহিদ আলী। তার ব্যাক্তিগত আক্রোশে দীর্ঘ ১৫ বছর অনেকেই নানাবিধ হয়রানির শিকার হলেও কেউ কোনো প্রকার প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জানান, আমরা খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে উপাচার্য স্যারকে অবহিত করেছি এবং তার যোগদান করার পূর্বেই এই নিয়োগ বাতিলের দাবি করেছি । কিন্তু উপাচার্য স্যার আমাদের দাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সহিদ আলীর মত একজন একনিষ্ঠ আওয়ামী কর্মী ও ফ্যাসিস্টের দোসরকে নিয়োগ দিয়েছেন। যদিও তিনি এখনো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র গ্রহন করেননি। তাহলে আমরা বলতে পারি একই সাথে তিনি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সহিদ আলী বলেন, আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিলাম। আলোচনা সমালোচনা থাকবে। আমি নিয়ম মেনে এখানে যোগদান করেছি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। তবে সেটি এখনো গৃহীত হয়নি বলে জানতে পেরেছি। তবে দ্রুত হবে।
এ দিকে তার নিয়োগের বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগীরা আবার বিকল্প পন্থায় সুবিধা ভোগে মেতে উঠেছে। ফলে বঞ্চিতরা বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছে। যারা ছাত্র জনতার বুকের রক্ত মাড়িয়ে লাশের ওপর দাড়িয়ে হুংকার দিয়েছিল। আজ তারা আবারও বিভিন্ন কৌশলে বিশেষ সুবিধায় সুবিধা নিচ্ছে। আমরা নিরুপায়। কিছুই বলতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা।

আরও পড়ুন
কোনো কারণেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশ আবার ফ্যাসিস্ট মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে : আজিজুল বারী হেলাল
পীরগঞ্জে সুধীজনদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়
কুলাউড়ায় কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ