December 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 3rd, 2025, 7:47 pm

ডিমলায় বুড়িতিস্তা নদী খননকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা

 

নীলফামারী প্রতিনিধি:

‎নীলফামারীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণ করা বিপুল সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে থাকায় বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর সেচ ও রিজার্ভার উন্নয়ন প্রকল্প বহু বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে। এতে সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

‎পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬–৬৭ অর্থবছরে বুড়ি তিস্তা এলাকার বিভিন্ন স্থানে মোট ১২১৭.৬১ একর (৪৯২.৫০ হেক্টর) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সরকারি (বিএস) রেকর্ডেও এসব জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বিপুল অংশ স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

‎২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাউবো ৬৬৭ একর জমি দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামে। তবে দখলদারদের বাধার মুখে অভিযান পুরোপুরি সফল হয়নি। বর্তমানে ওই জমির বড় অংশে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, এমনকি কৃষিকাজও চলছে—যা বহুবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পরও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়নি।

‎পাউবোর এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, “দখলদাররা অত্যন্ত প্রভাবশালী। প্রশাসনের দৃঢ় সহায়তা ছাড়া জমি উদ্ধারের উপায় নেই। এতে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে, সরকারি অর্থের অপচয়ও হচ্ছে।”

‎স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক জেলা বিএনপি নেতা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, ‎“আমরা বহুদিন ধরে বুড়িতিস্তা প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড আমার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দিয়েছে, আমি দুইবার জেলও খেটেছি। আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই; জনগণের স্বার্থে কথা বলেছি। পাউবো যদি আলোচনায় বসে সমাধান চায়, আমি আলোচনায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

বুড়ি তিস্তা রক্ষা কমিটির সাবেক নেতা সহিদুল ইসলাম মাষ্টার বলেন,  “সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে নদী–খাল উন্নয়ন করছে; কিন্তু কিছু উশৃংখল ব্যক্তির কারণে কাজ এগোচ্ছে না। প্রশাসন চাইলে একদিনেই জমি উদ্ধার করা সম্ভব।”

‎ডিমলা–জলঢাকা অঞ্চলে বুড়িতিস্তা নদী খনন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা চলছে। স্থানীয়দের দাবি, তাদের পূর্বপুরুষের মালিকানাধীন জমিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস ও চাষাবাদ করছেন; জমির দলিল–খতিয়ান বৈধ। কিন্তু “নদী খনন” এর নামে পাউবো ফসলি জমি নষ্ট করতে চাইছে।

‎এই ইস্যুতে এলাকাবাসী বারবার মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও আন্দোলন করে আসছে। তাদের অভিযোগ, পাউবো একাধিক মামলা করার ফলে এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ আসামি হয়েছে। বহু দফা বৈঠক হলেও কোনও সমাধান আসেনি।

‎পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারী যন্ত্রপাতি আনে এবং পাউবোর পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী আনসার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

‎এরপরই এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা গত ২ ডিসেম্বর ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নীলফামারী ডোমার–ডিমলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নিয়াজ মেহেদী। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।

‎নীলফামারী পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেছেন, “সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি হলে তা প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। তবে স্থানীয় জনগণ চাইলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানও খুঁজে বের করা যেতে পারে।”