December 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 3rd, 2025, 7:57 pm

খুলনা-১ (দাকোপ ও বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত  প্রার্থী- ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী

খুলনা–১ আসনের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষ্ণ নন্দী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো এই আসনে একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল, আর জামায়াতের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন সংবাদপোর্টাল, ইউটিউবে ছড়িয়েছে একটাই গুঞ্জন- খুলনা–১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন কৃষ্ণ নন্দী। যিনি ডুমুরিয়ার সনাতনী শাখার সভাপতি। প্রথমে বিষয়টি অনেকেই উড়িয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনই বাস্তব রূপ পায়। জামায়াত তাদের পূর্বঘোষিত প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফকে সরিয়ে কৃষ্ণ নন্দীকে মনোনয়ন দেয়। গতকাল থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় জামায়াতের আমীর এবং সেক্রেটারীর সাথে কৃষ্ণ নন্দীর ছবি ছড়িয়ে পড়ে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা

ত্রিয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। সেই উত্তাপের মাঝে কৃষ্ণ নন্দীর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনেকেই একে জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল বলে ব্যাখ্যা করছেন। কেউ কেউ একে দেখছেন নির্বাচনী এলাকায় নতুন ধরনের সামাজিক মেরুকরণ তৈরির উদ্যোগ হিসেবে।

খুলনা–১ (বটিয়াঘাটা–দাকোপ) আসনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বীর বসবাস। দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে ভোটের সমীকরণে হিন্দু ভোটব্যাংক বড় ভূমিকা রাখে। সেই বাস্তবতাকেই কাজে লাগাতে চাইছে জামায়াত।

প্রার্থী ঘোষণার পর কৃষ্ণ নন্দী জানান,দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগেই ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। এখন যখন দল আমাকে মনোনীত করেছে, আমি আত্মবিশ্বাসী যে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে জয় এনে দিতে পারবো। বটিয়াঘাটা–দাকোপে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার আছেন। তাদের আস্থা ও সমর্থনই হবে আমার শক্তি।

জামায়াতের মতো দল যাদের পরিচয় ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেখানে হিন্দু প্রার্থী ঘোষণাকে তিনি দেখছেন পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বহুত্ববাদী রাজনীতির নতুন সুযোগ হিসেবে।

গত ডিসেম্বরেই জামায়াতে ইসলামী সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে খুলনা–১ আসনে মনোনীত ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ। অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে তাকে পরীক্ষিত বলেই গণ্য করা হতো। এক বছর পর এই পরীক্ষিত নেতাকে সরিয়ে কৃষ্ণ নন্দীকে সামনে আনা হয়েছে। যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

মাওলানা আবু ইউসুফ অবশ্য বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, দল আমাকে সরিয়ে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করেছে। আমি এটিকে সাধুবাদ জানাই।

তার এই গ্রহণযোগ্যতা দলীয় শৃঙ্খলার পরিচায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করছেন দলীয় নেতারা।

খুলনা জেলা জামায়াতের একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি দলীয় সিদ্ধান্ত। নির্বাচনী বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন দলের এক জেলা পর্যায়ের নেতা।

তবে একই সঙ্গে অনেকের মধ্যেই রয়েছে বিস্ময়, উদ্বেগ এবং কৌতূহল। কেউ বলছেন, এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। আবার কেউ মনে করছেন এটি স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও তারা বাস্তবে জামায়াতকে কতটা আপন মনে করবে তা দেখার অপেক্ষায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বী কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াতের প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে খুলনা–১ আসনের রাজনীতি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি কি কেবল রাজনৈতিক কৌশল, নাকি ভবিষ্যতের বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক রূপান্তরের ইঙ্গিত, তা বলা কঠিন। তবে একথা নিশ্চিত—এই আসন এখন জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর একটি।