মহিব্বুল আরেফিন, রাজশাহী প্রতিনিধি:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর চারটি আসনে প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন বদলের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে। এমন কি দলের ভেতরে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। কোন্দলের কারণে দলের ভেতরে নির্বাচন পরিচালনায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এমন কি একাধীক আসনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর’ আশংকা তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মাঠের বাস্তবতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই না করেই কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে নির্বাচনী প্রচারণা এক রকম স্থগিত। এ কারণে গত কয়েকদিন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও যে কোন সময় বড় ধরণের দলীয় সংঘর্ষের ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
গত ৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে দুইটিতে এসেছে নতুন মুখ, আর চারটিতে পুরোনো প্রার্থীরাই দলীয় টিকিট পান। রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনের দলীয় প্রার্থী হয়েছেন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে মো. শফিক উদ্দিন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী-৪ আসনে ডি.এম.ডি. জিয়াউর রহমান, রাজশাহী-৫ আসনে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদ। এর মধ্যে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে রাজশাহী-২ (সদর) ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) বাদে বাকি চারটি আসনেই প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, এসব আসনে মনোনয়নের জন্য বিএনপির দুঃসময়ের নেতাদের বিবেচনা করা হয়নি। পাশাপাশি মাঠের বাস্তবতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই না করেই কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ তুলে বঞ্ছিত প্রার্থীর সমকর্থরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
দেখা গেছে, প্রার্থী ঘোষণার পরপরই চারটি আসনের মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনুসারীরা প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সংবাদ সম্মেলন, মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিত পালন করে। এমনকি প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর লোকজনের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। তবে এসব ক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও সংঘাতময় হয়ে উঠছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর)
এ আসনে দ্বন্দ্ব সবচেয়ে তীব্র। গত ২৭ মার্চ দলীয় ইফতার কর্মসূচি শেষে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী গণিউল হক এবং কৃষক দল নেতা নেকশার আলী ২ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এনিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র বিভাজনের সৃষ্টি হয়। এদিকে স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত ১২টি নির্বাচনে বিএনপি ও আ’লীগের প্রার্থীরা পাঁচ বার করে ১০ বার, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার বিজয়ী হন। আর ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নতুন প্রার্থী হিসেবে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন মনোনয়ন পান। তিনি সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই। ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হন।
এই আসনে এবার আরোও বিএনপির কয়েক জন নেতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এদের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান মার্কনি, জিয়া পরিষদের নেতা অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব এবং প্রকৌশলী কেএম জুয়েল। এখানে শরীফ উদ্দিন এবং তারেকের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সবচেয়ে প্রকট। তাদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়।
এছাড়া মনোনয়ন ঘোষণার পরই কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় নেতা-কর্মীরা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে। তাদের অভিযোগ তিনি এলাকায় পরিচিত নন দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন না স্থানীয় যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে ‘ঢাকায় বসে প্রার্থী চাপিয়ে দেয়া হয়েছে’। একজন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, দলের কঠিন সময়ে যারা মামলা-হামলার মোকাবিলা করেছে, তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে ঢাকার লোক এনে দাঁড় করানো মানে তৃণমূলকে অপমান করা।”
রাজশাহী-২ (সদর)
রাজশাহী সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মিনু ও তার অনুসারীরা কিছুটা চাপে থাকলেও দলের ভেতরে তার গ্রহণযোগ্যতা ও স্থানীয় রাজনীতিতে মিনুর ‘ক্লিন ইমেজ’ এবং অভিজ্ঞতা এই আসনে তিনি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। তবে দলের তার বিরুদ্ধে ভেতর চাপা বিরোধীতা কাজ করছে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর)
শহরের উপকণ্ঠের পবা উপজেলার সঙ্গে মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিও গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১২টি নির্বাচনের ছয়টিতেই বিজয়ী হয়েছে আ’লীগ প্রার্থী। এছাড়া বিএনপি চারবার এবং জাতীয় পার্টি দু’বার নির্বাচিত হন। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল আলম রায়হান এবং সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের পুত্র নাসির হোসেন অস্থির। তবে মিলনকে প্রার্থী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের শতাধিক নেতা-কর্মী রাস্তায় নামে এবং বিক্ষোভ-অবরোধ করে। আর গত গত ১০ নভেম্বর রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের চৌদ্দপাই এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন এই আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত নাসির হোসেনের অনুসারীরা। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালাতে গিয়ে নিজের গায়ে আগুন লাগে ছাত্রদল নেতা শহীদুল ইসলামের। গত ১১ নভেম্বর এই শহীদুলকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।
একইদিনে রায়হানুল হকের অনুসারীরা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়ন বদলের দাবি করেন। তবে ২২ নভেম্বর সড়ক অবরোধের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রার্থী বিতর্ক আরও তীব্র আকার ধারণ করে। তাদের অভিযোগ তিনি দীর্ঘদিন ‘নিস্ক্রিয়’ ছিলেন দলীয় সংকটে মাঠে পাওয়া যায়নি এবং স্থানীয় নেতাদের মতামত নেয়া হয়নি। তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন এবং রাজশাহী-২ আসনের ভোটার। এই কারণে তৃণমূলের মধ্যে তাঁর প্রতি ‘আস্থাহীনতা’ তৈরি হয়েছে। গুরুতর অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর চাপ দিয়ে শফিকুল হক মিলন মনোনয়ন নেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দেন, প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা রয়েছে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা)
বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের এই নির্বাচনী আসন গঠিত। এখানে বিএনপির নতুন মুখ বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ড্যাব নেতা ডা. আশফাকুর রহমান শেলী। জিয়াউর রহমান বিগত সময়ে নির্যাতিত হলেও তার বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নানা অভিযোগ তুলে মনোনয়ন বাতিলের দাবি করছেন। গত ১৬ নভেম্বর উপজেলার ভবানীগঞ্জে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গণ-সমাবেশ হয়। সম্প্রতি থানায় পুলিশকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একটি জিডিও হয়েছে। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামাল হোসেনের সমর্থকদের বাড়িঘরে ককটেল হামলা, পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। এমন কি তার ভাই ও আউচপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাফিকুল ইসলাম শাফির বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিরাও একাট্টা।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর)
এই আসনে বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে আ’লীগ ছয়বার, বিএনপি পাঁচবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছিলো ছড়াছড়ি। প্রতিযোগীদের মধ্যে ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রুকুনুজ্জামান আলম, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রের সহকারী মহাসচিব সিরাজুল করিম সনু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল, ইশফাক খায়রুল হক ও প্রয়াত সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফা। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকেরা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডলকে জনগণ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিয়ে প্রার্থী বদলের দাবিতে দুই উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এছাড়া এখানে ১৫ মে দলীয় কোন্দলে বিএনপি কর্মী হাসিবুল ইসলাম খুন হন। দলের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জোবায়েদ হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে গত ১০ নভেম্বর রাজশাহী- রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মনোনয়ন বঞ্চিত বাকি চার প্রার্থীর অনুসারীরা। গত ১১ নভেম্বর বিকালে বিক্ষুব্ধ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিবপুরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটিতে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সড়ক অবরোধের ফলে দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনুসারীরা একে অপরের প্রতি বিষোদগার করছেন। দলীয় কর্মসূচি পাল্টাপাল্টি পালিত হচ্ছে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট)
তুলনামূলক শান্ত, তবে নীরব অসন্তোষ। এই আসনে বিএনপি আগের প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদ। তিনি স্থানীয় বিএনপিতে বেশ জনপ্রিয় একজন নেতা। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ হয়নি। আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বজলুর রহমান। কিন্তু জেলা বিএনপির কতিপয় নেতার দখলবাজী- চাঁদাবাজীর কারণে আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের অভিযোগ জেলা বিএনপির কতিপয় নেতার জমি ও বালুমহাল দখল-চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে তিনি নীরব ভূমিকায় রয়েছে।
রাজশাহীর ছয়টি আসনেই বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিরাট অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন চলছে। চারটি আসনে প্রকাশ্য বিক্ষোভ ও দুইটিতে নীরব ক্ষোভ মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। দলের ভেতরের বিভাজন নির্বাচন পরিচালনায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এমন কি একাধীক আসনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর’ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাঠে রয়েছেন এমন একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী জানান, কর্মীরা অনেক কিছু চাইছে, আমি কেন্দ্রে দিকে তাকিয়ে আছি। সময় ঠিক করে দেবে কি করতে হবে। মনোনীত প্রার্থীরা বলছেন, মনোনয়ন বঞ্চিতরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দলের ভেতরে বিভক্তি বিভাজন বাড়িয়ে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে জরুরিভাবে দলীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থীরা সুবিধা পাবে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি বড় দল। কিছু মতপার্থক্য আছে। ভোটের দিন সব ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে। ধানের শীষ ছয়টি আসনেই বিজয়ী হবে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে ‘ভাড়া করে’ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতার
বিএনপির ২৭২ প্রার্থী ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ১২ দলীয় জোট, সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন
কারাগারের অবহেলায় গুরুতর অসুস্থ হন খালেদা জিয়া: মির্জা ফখরুল