গণ–আন্দোলনের চাপে ১৯৯০ সালের এই দিনে তৎকালীন শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এতে শেষ হয় প্রায় নয় বছরের সামরিক-সমর্থিত স্বৈরশাসন। জাফর, জয়নাল, দিপালী, নূর ও ডা. মিলনসহ অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের গণতন্ত্রের পথচলা শুরু হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর দেশে সামরিক শাসনের যে ধারা শুরু হয়, তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।
দীর্ঘ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটের পাশাপাশি বাম রাজনৈতিক শক্তিগুলো টানা আন্দোলন চালায়। এ আন্দোলনের ফলেই এরশাদকে সরে দাঁড়াতে হয়। এই আন্দোলনে ডা. মিলন ও নূর হোসেনসহ বহু মানুষ জীবন দেন।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের নেতৃত্বে পাঁচটি বাম দল মিলে ১৯৯০ সালের ২১ নভেম্বর একটি যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করে। যদিও জামায়াত তিন–দলীয় জোটে ছিল না, তবুও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তারা অংশ নেয়।
স্বৈরশাসকের পতন ঘটলেও পরবর্তীতে এই রূপরেখার বাস্তবায়ন হয়নি। পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, কার্যকর সংসদ, মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন ও সুশাসন—এসব লক্ষ্য আজও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে।
ক্ষমতা ছাড়ার পর এরশাদ রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন এবং তাঁর দল জাতীয় পার্টি এখনও সক্রিয়। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে তিনি অংশ নেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবেও নির্বাচনে যায় জাতীয় পার্টি। এরপর টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে।
২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা সরকার এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। সে সময়ই জাতীয় পার্টি একদিকে সরকারে আবার অন্যদিকে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান করে, যার ফলে দলটি ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
২০১৮ সালের নির্বাচন ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলে ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
দিনটি উপলক্ষে বিএনপি পালন করে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’, আওয়ামী লীগ পালন করত ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ নামে, আর এরশাদের জাতীয় পার্টি দিনটিকে স্মরণ করে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
তফশিল ঘোষণার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি: ইসি সচিব
মিয়ানমারে পাচারকালে সিমেন্টবোঝাই ৩টি বোট আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী
কেউ যেন আমাদের ওপর কোনো দাদাগিরি করতে না আসে: ডা. শফিকুর