ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়ার কথাও বলেছে সংগঠনটি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড একটি বড় পরীক্ষার নাম। এই ঘটনায় দৃশ্যমান ও কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, অতীতেও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। ওসমান হাদির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সেই পথ অনুসরণ করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ছিলেন এবং জুলাই-পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সাহসী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কোনো ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই তিনি সব সময় সত্য উচ্চারণ করেছেন।
বর্তমান সরকারব্যবস্থায় যে আপাত স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার পেছনেও ওসমান হাদির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব। তিনি বলেন, “ওসমান হাদির রক্ত ঝরেছে, আর আমরা যদি খুনিদের বিচার না দেখি—তা হতে পারে না। জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পরিকল্পিতভাবে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডকে মূল আলোচনার বাইরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, হাদিকে ‘মেইন সাবজেক্ট’ থেকে বাদ দিলে আর কোনো বিষয়ই মূল সাবজেক্ট থাকে না। রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই নেওয়া উচিত।
টাইম ফ্রেম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চ আশা করছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্র স্পষ্ট অবস্থান জানাবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রকে জনগণের সামনে এসে জানাতে হবে— ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারে এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হাদির রক্তের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। মাথা ভেদ করে গুলি যাওয়ায় তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিন দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, অতিরিক্ত আইজিপিকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে শহীদ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনাকে গুরুত্বহীনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চ আগামী দিনের কর্মসূচি ও নতুন দাবিদাওয়া জানাতে আবারও সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির জানাজার আগে বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। সে সময় তিনি দুটি দাবি উত্থাপন করেন।
তিনি বলেন, খুনি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারীসহ পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে জনতার সামনে এসে গত এক সপ্তাহে এই হত্যাকাণ্ডে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
আইনের শাসন কাকে বলে দেখিয়ে দিতে চাই: সিইসি
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
১১৯ আসনে ১৩১ প্রার্থী ঘোষণা করল জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট