নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারাগারে থেকেও খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্র দু’টি অবিচ্ছেদ অংশ। বাংলাদেশে এমন ক’জন নেতা আছেন যে, এখনও কারাগারে আছেন, হাসপাতালে আছেন? তিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, মাথা নোয়াননি, মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। শুক্রবার (৩রা ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসা’র দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা চাচ্ছি যে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দেন, চিকিৎসার সুযোগ দেন; এটা নুন্যতম দাবি। এটা দয়া নয়, মহানুভবতা নয়, মানবিকতা নয় এটা একজন নাগরিকের অধিকার। একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তিলে তিলে সচেতনভাবে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা পাওয়া খালেদা জিয়ার অধিকার, আমাদের অধিকার গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়া, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া, কথা বলার অধিকার ফিরে পাওয়া। খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠিয়ে তাকে ‘তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে’ বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে অত্যন্ত সচেতনভাবে হত্যা করা হচ্ছে- এই কথা আমরা বার বার বলছি। পৃথিবীর সব দেশ এটা জানে। আমাদের দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী সবাই বলেছেন যে, দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসার সুযোগ দেন। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে এসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ জেগে উঠতে শুরু করেছে এবং জেগে উঠবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার অববাহিকায় উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে এবং তোমাদের তখতে তাউস ভেঙে ছারখার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদেরকে আজকে জেগে উঠতে হবে। এই দুরাত্মা, দুঃশাসনকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে ন্যায়-সত্য-মুক্ত-সুন্দর গণতান্ত্রিক সরকার ও মুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং এই রক্তক্ষরণ যদি বেশিদিন চলে তাহলে তিনি বাঁচবেন না। তার (খালেদা জিয়া) যে রোগ হয়েছে আপনারা শুনেছেন- লিভার সিরোসিস। এটা মারাত্মক রোগ। এ রোগের চিকিৎসা আমাদের দেশে সেভাবে নেই। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জার্মানিতে এ রোগের চিকিৎসা ভালো হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন, আজকে জুম্মাবার, পবিত্র দিন। আমাদের নেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া করি। আমরা এর আগের জুম্মার দিন দোয়া করেছি, বায়তুল মোকাররমে লাখো মানুষ দোয়া করেছেন। প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তে নামাজের সময়ে আমাদের মা-বোনেরা দোয়া করছেন- আল্লাহ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। কৃষক দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ছড়িয়ে পড়েন গোটা বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সব কৃষককে বের করে আনুন ঘর থেকে, তারা তাদের নেত্রীর জন্য, বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য, বাংলাদেশের আত্মার জন্য তারা সবাই আসুক, রাজপথে দাঁড়াক। আমরা সবাই একসঙ্গে দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে বড় দুসময়, দেশে খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীক চিকিৎসা দেওয়া হয় না, বাংলার মানুষ তো চিকিৎসাই পায় না। আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ট নির্বাচন সম্ভব না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা কী আছে? আপনারা দেখেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে কত মানুষের প্রাণ গেল, প্রকাশ্যে দিবালোকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্রসফায়ার বেড়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যাকা-ে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যটা কি? উদ্দেশ্য একটাই আসল যে খুনি তাকে যেন ধরা না যায়। ক্রসফায়ার হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য একটা অপরাধ। পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর ক্রসফায়ার করে হত্যা করার মানে কি? রাষ্ট্র থাকে? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকে? আওয়ামী লীগ আসার পর কত যে বেড়েছে, আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও কৃষক দলের সহ-সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক টি এস আইয়ুব, মোশারফ হোসেন এমপি, ঢাকা মহানগর কৃষক দলের সভাপতি নাছির হায়দার, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, সাবেক ছাত্র নেতা হায়দার আলী লেলিন, দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো সমাবেশ, মানববন্ধনের ধারাবাহিক কর্মসূচি করে যাচ্ছে। আজ শনিবার ছাত্র দলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে ৮ দিনের এই কর্মসূচি শেষ হবে।
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের হোটেলের সামনে টেসলার গাড়ি বিস্ফোরিত, চালক নিহত
সিগারেট খাওয়া ক্ষতিকর, সেটা নিষিদ্ধ হোক : শাহরুখ খান
ইসলামে সম্মানিত মাস রজব