আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর :
রংপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসের প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারগুলোতে মানুষের ঢল নামে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। বৃহস্পতিবার ভোরে রংপুর নগরীর মর্ডাণ মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ অর্জন এ ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা হয়। পরে মর্ডান মোড়ে অর্জন, ডিসির মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, কালেক্টরেট সুরভি উদ্যানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন পুষ্পস্তবক করেন।বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রংপুর স্টেডিয়ামে জেলা
প্রশাসন আয়োজিত বিশেষ কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে পরিবেশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, বিএনসিবি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং শিশু-কিশোর সংগঠন কুচকাওয়াজে অংশ নেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। অনুষ্ঠানে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সম্মানিত অতিথিরা। পরে মহানর বিজয়ে দিবসের শুভেচ্ছা বক্তৃতা শেষে অভিভাদন মঞ্চ থেকে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে পরিবেশনা উপভোগ করেন তারা। এ সময় পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচে পড়া ছিল।
দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিট থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ছাড়াও ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে যায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ্য ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো।
এদিকে দুপুরে রংপুর নগরীতে মুজিব শতবর্ষ ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগি সংগঠনগুলো। এ ছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় রংপুর টাউন হলে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।এ ছাড়াও নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় অর্জনের এ দিনটি।
বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী শিক্ষা উপমন্ত্রী হাসান চৌধুরী মহিবুল, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বিশেষ অতিথি ছিলেন। বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনায় অংশ নেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা। এরপর পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, বিভিন্ন অনুষদ,
বিভাগ, দপ্তর ও আবাসিক হলগুলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগসহ বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের ম্যুরালেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর।
মুজিব শতবর্ষ ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে শপথ করেছে লক্ষাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টায় রংপুর স্টেডিয়ামে এই শপথ অনুষ্ঠান করা হয়।এর আগে দুপুর ২টার পর থেকে রংপুর মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লোকজন স্টেডিয়ামের দিকে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে মাঠে বাড়তে থাকে জনসমাগম। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীরাও।মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর শপথের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছুটে আসেন।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকদের জয়বাংলা স্লোগানে আসা মিছিলের ধ্বনিতে স্টেডিয়ামপাড়ায় অন্যরকম বিজয় উদযাপনের আবহ তৈরি হয়।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ,পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী , জেলা আওয়ামীলীগের সভাপত মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়াও জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে ভার্চুয়ালি রংপুর স্টেডিয়ামে যুক্ত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সকল পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের
প্রধানগণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, কৃষক শ্রমিক, শিক্ষার্থী এই শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ জানান কমিশনারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ২৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ এবং তাদের পরিবারবর্গকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক আসিক আহসান জানান বিকেলে নহানগরীর ২০০ জন মুক্তিযোদ্বার বাড়িবাড়িতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান হয় ।##
আরও পড়ুন
কোম্পানীগঞ্জে বিলুপ্ত পথে খেজুর গাছ ও রস!
প্রিপেইড মিটার বন্ধের দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন
রংপুরে নবানযোগ্য জ্বালানি প্রচারণা অনুষ্ঠিত