জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আদিবাসি সাঁওতালরা বাঙ্গালীরা। দুপুর ১২টা থেকে দুইঘন্টাব্যাপী তারা এখানে অবস্থান নেয়। পরে তারা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমানের কক্ষে গিয়ে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবগত করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এরআগে তারা প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে বাসযোগে গাইবান্ধা আসেন। গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের এলজিইডি কার্যালয়ের সামন থেকে মিছিল বের করে মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কর্মসূচিতে তির-ধনুক, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে দুই শতাধিক সাঁওতাল-বাঙ্গালী নারী-পুরুষ অংশ নেন।
তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও সাহেবগঞ্জ এলাকায় তাদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে এসব কর্মসুচির আয়োজন করা হয়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও জাতীয় আদিবাসি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি অবস্থান কর্মসুচির আয়োজন করে।
অবস্থান চলাকালীন সময়ে বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, সদস্য স্বপন শেখ, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, তৃষ্ণা মুরমু প্রমুখ। এছাড়া অবস্থান কর্মসূচিতে আদিবাসীদের ৭ দফার দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক ও জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা শাখার আহবায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, সাবেক ছাত্রনেতা ওমর হাবিব বাদশা, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হাসান দীপন, সাঁকোয়া ইপিজেড বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক কুশলাশীষ কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবিতে তারা দীর্ঘ ছয়বছর ধরে আদালতসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সবাই বিচারের নামে শুধু তারা টালবাহানা করে যাচ্ছে। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের কেউ গ্রেপ্তার করেনা। এনিয়ে সাঁওতালদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সময়ে দেশে ছোট ছোট ঘটনাগুলোও সংশ্লিষ্টদের নজরে আসলে তার দ্রুত বিচার হয়। আর সাঁওতাল হত্যার ঘটনা দেশ-বিদেশ তোলপাড় হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টনক নড়ছে না। কারণ এখানে একটি স্বার্থন্বেষী মহল কাজ করছে। সরকারের প্রতি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার এবং জমি ফেরত, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লাটপাট, ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। তারা বলেন, সাঁওতালদের রক্তেভেজা জমিতে ইপিজেট করতে দেওয়া হবে না।
রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের বাগদাফার্মের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে রংপুর সুগার মিল স্থাপন করে। চিনিকলের আখ চাষের জন্য পূর্ব ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার আদিবাসি ও বাঙ্গালীদের ভোগদখলীয় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি “দি ইষ্ট বেঙ্গল(ইমার্জেন্সী) রিক্যুইজিশন অব প্রোপার্টি এক্ট ১৯৪৮” অনুযায়ি সুগার মিলের আখ চাষ ও আখ সরবরাহের জন্য রিকুইজিশন করে। চুক্তিতে বলা হয় যে কাজের জন্য (ইক্ষু চাষ) জমি রিকুইজিশন করা হয়েছে তা করা না হলে খেসারতসহ পূর্ব মালিকদের কাছে ফেরত দিতে হবে।
এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। একসময় চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নামে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডি নিহত, অন্তত ২০ জন আহত হন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট বেপজার চেয়ারম্যান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাগদাফার্ম এলাকায় আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিদের পৈত্রিক জমির ওপর ইপিজেড নির্মাণের ঘোষণা দেন। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। তখন থেকে ওই কমিটির উদ্যোগে ইপিজেট না করতে আন্দোলন চলছে। তারা চিনিকলের জমিকে বাপ-দাদার সম্পত্তি দাবি করে তা ফেরত দেওয়া জন্য এই কমিটি গঠন করে।
আরও পড়ুন
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
রংপুরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন
কোম্পানীগঞ্জে বাস চাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২