নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃচ্ছ সাধনের পথে হাঁটছে সরকার। সেজন্যই উন্নয়ন প্রকল্পে ৫০ শতাংশের বেশি গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে পরিবহণ কেনা ও প্রতিস্থাপনেও বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। ওসব খাতে অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বাজেটে মোট বরাদ্দের ৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা স্থগিত করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ সম্প্রতি ওই সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হচ্ছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ওই উন্নয়ন কর্মকা-ের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন গাড়ি কেনাকাটা করে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের আলোকে বর্তমানে প্রকল্পের গাড়ি কেনাকাটার ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারবে না।
সূত্র জানায়, বর্তমান সারা দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি অর্থবছরের প্রথম দিনই থেকেই সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। সব ধরনের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেল, পর্যটন কেন্দ্র, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ আছে। ফলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। আর আয় না করতে পারলে ব্যয় করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে অর্থবছর শুরু থেকেই ব্যয় কমানোর পক্ষে হাঁটছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদরাও সমর্থন করছে। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় ভালো নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দা। খুব স্বল্প সময়ে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এমন আশা করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি করোনার কারণে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ি কেনা সীমিতকরণ করায় এটি ভালো উদ্যোগ। এমনিতে ওসব খাতে অপচয় ও অপব্যবহার বেশি হয়।
সূত্র আরো জানায়, সরকারের কৃচ্ছ সাধনের আওতায় আগামীতে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রশিক্ষণ বরাদ্দও কমতে পারে। কারণ করোনার মধ্যে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হচ্ছে না। তাছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও কৃচ্ছ সাধন ঘোষণা আসতে পারে। তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পাশ হয়েছে। নতুন বাজেট পাশের একদিন পর অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের প্রথম দিনই পরিবহণ কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিবহণ কেনাকাটা খাতে ৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বরাদ্দ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনে নতুন পরিবহণ ক্রয় ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় করার কথা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়েছে, বাজেটে ওই খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। সেখানে আরো বলা হয়, পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। আর অবিলম্বে ওসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্র অতি জরুরি হিসাবে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরিপত্রে আরো বলা হয়, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকারের কৃচ্ছ সাধন নীতির আলোকে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সব প্রকার নতুন ও প্রতিস্থাপন যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খাতের বরাদ্দকৃত বাজেটের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। চলতি অর্থবছরের পরিচালনা ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন কেনা ও প্রতিস্থাপনে এ নির্দেশ বহাল থাকবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বাজেট) সিরাজুর নুর চৌধুরী জানান, বিদায়ী অর্থবছরে ভ্রমণ খাত, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রশিক্ষণ ভাতা, বিভিন্ন অফিসে নতুন পরিবহণ ক্রয় এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১৫ শতাংশ ব্যয় স্থগিত করা হয়েছিল। ওসব সিদ্ধান্তের কারণে যে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার আহ্বান
রমজানে কোনো পণ্যের সংকট থাকবে না: ভোক্তার ডিজি
হাসিনাকে ভারত ফেরত দেবে না বলে শুনতে পাচ্ছি: মাহফুজ আলম