কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী হাওর উপজেলার ধানচাষিরা এবার বোরো ধান কাটার মৌসুমে চামরাঘাট, ভৈরব, আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
ফলে মণ প্রতি ধানচাষিরা ১৫০-২৫০ টাকা লোকসান গুনছেন। যা তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় হাওরের চাষীরা ইতোমধ্যে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় হাওর এলাকার কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটার ফলে এগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এতে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া বোরো শ্রমিক সঙ্কটে লোকসান বেড়েছে। কারণ কৃষকেরা বোরো ফসল কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পেতে অতিরিক্ত টাকা গুনছেন।
এবার ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হাওরের কৃষকেরা হতাশায় নিমজ্জিত করছে। তারা এখন বিলাপ করছে এবং কীভাবে তারা স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া তাদের ঋণ শোধ করবে তা ভেবে দিন পার করছে।
ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিরা। কৃষকেরা ব্রি ধান ২৮ বিক্রি করতে পাইকারি বাজারে যাওয়ার পর থেকে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
চামরাঘাট চালের বাজার পরিদর্শন করে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান হাওর এলাকার কৃষকেরা নদীপথে ধান নিয়ে আসছেন। রাইস মিল মালিকেরা এখান থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন।
এ বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কারণ হাওর এলাকায় উৎপাদিত ধান খুব কম দামে কিনছেন মিল মালিকেরা।
শ্রম খরচসহ মোটা ধানের প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার কাছাকাছি, যেখানে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেগুলোর উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
ইটনা উপজেলার ধনপুরের কৃষক করিম মিয়া জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরব বাজারের পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিন মিয়া জানান, অষ্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষকই মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছেন। তাই কৃষকেরা এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইটনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষকই অতিদরিদ্র। ধারের টাকা পরিশোধ করতে বৈশাখের প্রথম দিকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। কারণ বৈশাখ মাসে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মহাজনরা। তারা কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতে পারলে ধানের ভালো দাম পাবে।’
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বেরোবির ছাত্র সংসদ নির্বাচন
পাবনায় চাঁদাবাজির মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ