নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে সব ধরনের জ্বালানি পণ্য মজুদ ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমান মজুদ ক্ষমতা দিয়ে দেশজুড়ে টানা ৪০ দিন পর্যন্ত জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু তা ৬০ দিনে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জাতীয় জ্বালানি নীতি (ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি) অনুযায়ী গত দশ বছরে জ্বালানি পণ্যের মজুদ ক্ষমতার টার্গেট এখনো পূরণ না হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তা নিয়ে বহুমুখী কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত ২০০৯ সালে ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি প্রণীত হয়েছে। পলিসি অনুযায়ী দেশের সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের মজুদ ক্ষমতা ন্যূনতম ৬০ দিনে উন্নীত করার পরামর্শ রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে দেশের জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩০ দিনের। ইতিমধ্যে তা দু’দফায় বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ দিনে উন্নীত হয়েছে। যেহেতু দেশে চাহিদার জ্বালানি তেল সম্পূর্ণভাবে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরশীল, সেক্ষেত্রে চলমান নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় টানা কোন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হলে বর্তমান মজুদ ক্ষমতা নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টির আশঙ্কায় ধারণক্ষমতা ন্যূনতম ৬০ দিনে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্যতার বিষয়টি পলিসিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জ¦ালানি পণ্যের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেজন্য একেবারে দ্রুততম সময়ে জ¦ালানি পণ্যের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধি একটি অসম্ভব ব্যাপার। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিপিসি দেশে জ্বলানি তেলের একক আমদানিকারক ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো বিপণনে নিয়োজিত। বর্তমানে দেশে ক্রমাগতভাবে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও বর্তমানে বিশ^ব্যাপী করোনার দাপটের কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদার টার্গেট ধরা হয়েছে ৬৮ লাখ ১৫ হাজার টন। গত অর্থবছরে তা ছিল প্রায় ৬৬ লাখ টন। তাছাড়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭০ লাখ ৭৫ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭২ লাখ ৯৫ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭৫ লাখ ২৫ হাজার টন, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৭৮ লাখ টন, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ৮২ লাখ ৬০ হাজার টন, ২০২৮-২০২৯ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। কিন্তু ওই অনুযায়ী দেশে এখনো জ্বালানি তেলের মজুদভান্ডার গড়ে ওঠেনি। তবে বিপিসি বর্তমান সরকার প্রণীত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিপিসির মজুদ ক্ষমতা ৪০ দিনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন তেল আমদানি কার্যক্রমে বড় ধরনের কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে টানা ৪০ দিনের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে বিপিসি। তবে ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি অনুযায়ী ওই ক্ষমতা ৬০ দিনে উন্নীত করতেই হবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বিপিসি জ্বালানি পণ্যসমূহের মধ্যে বড় অংশটিই পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। তার মধ্যে সব মিলে আমদানির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ টন। যার মধ্যে ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। অবশিষ্ট পরিমাণ অর্থাৎ ডিজেল আকারে ৫২ লাখ টন আসে। বিপিসি নিয়ন্ত্রিত তিনটি বিপণন নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে ওই তেল বাজারজাত করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের চাহিদার জ্বালানি তেলের পুরো অংশের অর্ধেকই জিটুজি ভিত্তিতে আমদানি হয়। অবশিষ্ট অর্ধেক টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। জিটুজি জ্বলানি তেল মূলত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসে। আর টেন্ডারের মাধ্যমে মালয়েশিয়া, চীন, দুবাই, ইন্দোনেশিয়া থেকেও সর্বনিম্ন দরদাতার মাধ্যমে ক্রয় করা হয়ে থাকে। আর বিপিসি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি ও বিপণনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমদানি ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু তারপরও দৈবাৎ কোন কারণে আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে সেক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬০ দিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম এমন মজুদ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য ন্যাশনাল এনার্জি পলিসির দিক-নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত জ্বালানি তেলের একটিমাত্র পরিশোধনাগার ইআরএল (ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ) বিপণন সংস্থা পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মজুদভান্ডার। বিদেশ থেকে মাদার ভেসেলযোগে প্রতিনিয়ত তেল আমদানি হয়ে আসছে এবং তেলবোঝাই ওই জাহাজ বহির্নোঙ্গরে এসে পৌঁছার পর সেখান থেকে বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) জাহাজযোগে লাইটারিং করে পতেঙ্গার অয়েল ডিপোতে নিয়ে আসা হয়। সেক্ষেত্রে তেলের বিভিন্ন চালান খালাসে বিপণন সংস্থাগুলোকে নির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ওই অনুযায়ী খালাস কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ইআরএল ও তিন বিপণন সংস্থা মিলে হালনাগাদ ৪০ দিনের মজুদ ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। তবে সমুদ্র তলদেশ দিয়ে পাইপ লাইন বসিয়ে লাইটারিং বাদ দিয়ে জাহাজ থেকে সরাসরি অয়েল ডিপোতে আনার যে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে চলেছে, তা সম্পন্ন হলে মজুদ ক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে। তাছাড়া সমুদ্রবক্ষে (কুতুবদিয়ার অদূরে) ভাসমান যে টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে সেটা সম্পন্ন হলে সেখানে ১ লাখ ৪০ হাজার টন অপরিশোধিত এবং ৮০ হাজার টন পরিশোধিত তেল রাখার ধারণক্ষমতা থাকবে। ফলে দেশের সর্বমোট জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা আরো বাড়বে।
আরও পড়ুন
গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনা নিহত বেড়ে ৮০০
শাকিবের ডাকে হাজির যেসব তারকা
ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ রোগী