পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রপ্তানিমুখী চারকোল শিল্প প্রতিষ্ঠায় ‘চারকোল নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পাটখড়িসহ অন্য যে কোনো উপকরণ দ্বারা চারকোল উৎপাদন এবং এ সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহকে বিকশিত করার লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে এই বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি বিধায় চারকোল নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়।
পাটখড়ি থেকে চারকোল উৎপাদন পাটের বহুমুখী ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পাটকাঠিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পোড়ানো, শীতলীকরণ ও সংকোচন করে চারকোল প্রস্তুত করা হয়। চারকোলে ৭৫ শতাংশ কার্বন থাকে। পানি বিশুদ্ধকরণ, আতশবাজি, জীবন রক্ষাকারী বিষ নিরোধক ট্যাবলেট, প্রসাধন সামগ্রী, ফটোকপিয়ার ও কম্পিউটারের কালি তৈরির কাঁচামাল হিসাবে চারকোল ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরাসহ দেশের বেশ কিছু জেলায় প্রায় ৪০টি কারখানায় চারকোল উৎপাদন হচ্ছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে বার্ষিক প্রায় সাত হাজার ৭১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন (প্রায়) চারকোল রপ্তানি করে দেশে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।
চারকোল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি আয় ও রাজস্ব বৃদ্ধি ছাড়াও প্রায় ২০ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাময় এই চারকোল শিল্প স্থাপন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে এতদিন কোন নীতিমালা ছিল না। পরিবেশবান্ধব পাটখড়ি থেকে অত্যন্ত কম মাত্রার কার্বন নিঃসরণ হওয়ায় চারকোল শিল্প পরিবেশবান্ধব।
এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য:
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের চারকোল উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি বিষয়ে সহায়তা প্রদান, দক্ষ জনবল তৈরি, উৎপাদিত চারকোলের মান নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান, দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সুযোগ সম্প্রসারণ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা প্রদান, চারকোল রপ্তানিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা প্রদান, চারকোল শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, চারকোল শিল্পে প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষ, উপযুক্ত ও প্রতিযোগিতা সক্ষম গতিশীল ব্যক্তিখাত সৃষ্টি, পরিবেশসম্মত উপায়ে চারকোল উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং চারকোল রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্য কার্গো ইনসিডেন্ট নোটিফিকেশন সিস্টেম (সিআইএনএস), দ্য ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অব পোটেকশন এন্ড ইনডেমনিটি ক্লাবস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এর নির্দেশনাবলীসহ প্রযোজ্য অন্যান্য আইন/বিধি/নীতি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ।
বাস্তবায়ন কৌশল:
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়/পাট অধিদপ্তর চারকোল শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যখন যেভাবে প্রয়োজন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং দপ্তর/অধিদপ্তর/পরিদপ্তরের সঙ্গে (যেমন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ইত্যাদি) যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চারকোল শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে আন্তঃমন্ত্রণালয়/আন্তঃদপ্তর যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত সমাধান অর্জনে প্রয়াস গ্রহণ করবে।
চারকোল শিল্পে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিসহ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চারকোলের যথাযথ (স্ট্যান্ডার্ড) মান নির্ধারণপূর্বক চারকোল শিল্প সংক্রান্ত মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, প্রয়োজনে এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে।
তদারকি ও পরিবীক্ষণ:
পাট অধিদপ্তর সরকারের পক্ষে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন, তদারকি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। এছাড়া সময়ে সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নীতিমালা সংশোধনসহ নতুন নতুন নির্দেশনা ইত্যাদি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-মেয়ে
মাসুদা ভাট্টির বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিবেদন
শীতের সবজির বাজারে স্বস্তি, কমেছে পেঁয়াজ,ডিম-মুরগির দামও