নিজস্ব প্রতিবেদক:
বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ ডকইয়ার্ডের ছড়াছড়ি। নদীগর্ভ দখল করে গড়া ওঠা ওই ডকগুলোর কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বুড়িগঙ্গার জীবপ্রকৃতিও নষ্ট হচ্ছে। বিগত ১৯৬০ সাল থেকেই রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ওসব ডকইয়ার্ড। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ওসব ডকইয়ার্ডের কারণে সংকুচিত হচ্ছে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের নৌপথ। নৌ-মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিআইডব্লিউটিএর উদ্যোগে ২০১৯ সালে বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে ব্যাপক উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তখন নদী-তীরবর্তী অনেক বড় স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ৩২টি ডকইয়ার্ড ভাঙা হয়নি। নদীর ওপর অবৈধভাবে টিকে থাকা ওই ডকইয়ার্ডগুলো সরানো খুব কঠিন ব্যাপার। বর্তমানে কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে মাদারীপুর ডকের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও লাইসেন্সহীন আরো ৩১টি ডকইয়ার্ড সচল রয়েছে। প্রতিটি ডকেই নতুন জাহাজ ও লঞ্চ নির্মাণ কর্মযজ্ঞ চলছে। পাশাপাশি নদীতে নোঙর করে পুরনো জাহাজ মেরামতের কাজও চলছে। বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি ও ভাঙার বিভিন্ন অংশও নদীতেই ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোতে কাজ করছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ, তাদের কারোরই নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম। তাছাড়া মেরামতের সময় পুরনো জাহাজে থাকা ডিজেল, লুব্রিক্যান্টসহ তলদেশে থাকা বিভিন্ন বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত বছর ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রাণ হারায় অর্ধশতাধিক মানুষ। ওই দুর্ঘটনার পেছনের কারণ জানতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। ইঞ্জিনটি ঢাকা কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগের একটি অবৈধ ডক থেকে সংযোজন করা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসা ওই ডকটি বন্ধ করে দিলেও মীরেরবাগে আরো ৩১টি অবৈধ ডক সচল রয়েছে।
এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে ওসব ডকইয়ার্ড নদীগর্ভ দখল করে গড়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সহযোগিতা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, নদীগর্ভের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা ডকইয়ার্ডের জমিগুলো আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে নামজারি করা হয়েছে। যা নদীর ক্ষেত্রে আইনসঙ্গত হয়নি।
অন্যদিকে একাধিক ডক মালিকরা জানান, ডকইয়ার্ডের লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতায় লাইসেন্স পেতে দেরি হচ্ছে। এখানকার কোনো ডকেরই লাইসেন্স নেই। এখান থেকে ডক সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। বেশকিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই ডকইয়ার্ডগুলো এখান থেকে সরে যাব।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চেšধুরী জানান, কভিডের আগে ডক মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখান থেকে ব্যবসা অন্য কোথাও সরিয়ে নেবে। তবে কোথায় সরিয়ে নেবে ওই বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যেহেতু এখানে ব্যবসায়ীদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে, সেজন্য হুট করেই তাদের ফেলে দেয়া বা সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে আগানো হচ্ছে। সেজন্য সময় লাগবে।
আরও পড়ুন
পিছিয়ে থেকেও ফেরার গল্প লিখল বাংলাদেশ
লুকিয়ে রাখা বাচ্চা পৌঁছে দিলে ২০ হাজার ডলার দিব: তানজিন তিশা
যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে তারাই পিআর নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন