নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির দখলে রাজধানীর সড়ক। রুট পারমিট ছাড়াই রাজপথে চলছে অনেক বাস। নির্ধারিত রুটে চলে না অনেক বাস। বরং নোংরা সিট ও লক্কড়ঝক্কড় বাসেই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীর গণপরিবহনে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হজম করতে হচ্ছে। মূলত এক শ্রেণীর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ হলেও গণপরিবহনের চেহারা দিন দিন জীর্ণ হচ্ছে। রাজধানীর গণপরিবহন সেক্টরে কোন পরিবর্তনই নেই। পরিবহন খাত এবং বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা মহানগরীতে চলমান বাস-মিনিবাসের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশের দরজা-জানালা ভাঙ্গা। বসার সিট ছেঁড়া। ৮০ শতাংশ বাস-মিনিবাসের সিটে দুই স্তরের কাঠামো (স্টিল ও ফোম/কাপড়) নেই। আর যেসব বাসে স্টিলের কাঠামোর ভেতর ফোম বা কাপড়ের স্তর রয়েছে সেগুলোরও অধিকাংশ ছেঁড়া। তাছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ বাসের পিছনের সিগনালিং লাইটগুলো অকেজো। কিছুকিছু বাস-মিনিবাসে পাখা থাকলেও বেশিরভাগ নষ্ট থাকে।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাস-মিনিবাসের মধ্যে অর্ধেকের বেশির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (২০ বছর) পেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে চলাচলকারী ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাসই ফিটনেসবিহীন। বিগত ২০১১ সালের জুনে রাজধানীতে মিনিবাস নিবন্ধন না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তার পর আর কোন নতুন মিনিবাস রাজধানীতে নামেনি। গত ১১ বছরে বেসরকারী খাতে নতুন কোন বড় বাসও নামেনি। তবে বিআরটিসি বেশকিছু বাস নামালেও তার অনেকগুলোই অকেজো হয়ে পড়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে ৯২টি কোম্পানির বাস সার্ভিস রয়েছে আর ৩ বছরে ২৭টি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া ১৬৬ রুটের মধ্যে ১১২টিতে কোনো বাস নেই। ১২টি রুটে চলছে মাত্র একটি কোম্পানির বাস। ২০১০ সালে রাজধানীতে ২০ বছরের অধিক পুরনো বাস-মিনিবাস চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময় একবার অভিযান চালানো হলে অনেকেই পুরনো বাস-মিনিবাস বন্ধ করে রাখে। কিন্তু অভিযান শেষে আবারো পুরনো, ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাস নামানো হয়। আর গত ৪ বছরে ওসব গাড়ির বিরুদ্ধে আর অভিযান চালানো হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া সব বাণিজ্যিক গাড়ির ফিটনেস সনদের মেয়াদ এক বছর। শুধু প্রাইভেটকার ও জীপসহ ব্যক্তিগত গাড়ির ফিটনেসের মেয়াদ ২ বছর। যে কোনো গাড়ির ফিটনেস দেয়ার ক্ষেত্রে ৫৯টি বিষয় দেখা হয়। কিন্তু ওসব বিষয় পুরোপুরি যাচাই করলে সারাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ গাড়ি ফিটনেস পাবে না। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ন্যূনতম বিষয়গুলো দেখা হয়। ফিটনেসের সময় যে বিষয়গুলো দেখা হয় সেগুলো হলো গাড়ির পরিচয়, ইঞ্জিনের পাওয়ার ইউনিট, চালকের সিটের অবস্থা, বডির নিরাপত্তা, জানালার নিরাপত্তা ও অবস্থা, ইঞ্জিনের সক্ষমতা, ধোঁয়া নির্গমন, চাকা এবং হুড, আকার এবং টায়ারের ধরন, টায়ারের অবস্থা, বাম্পার বার, অতিরিক্ত চাকা বহন, গাড়ি নকশা অনুযায়ী ট্রেলার কাপলিং, চাকার অবস্থা, ড্রাইভারের অবস্থান এবং পদক্ষেপ, প্রবেশের দরজা/ফ্ল্যাপ, লাগেজ বগিসহ বডির বাইরের অংশ, বাসের অভ্যন্তর এবং যাত্রী আসন, প্রবেশ এবং প্রস্থান ধরন এবং প্ল্যাটফর্ম, লুকিং গ্লাস অবস্থা, সামনের নির্দেশনা, অন্যান্য স্বচ্ছ উপকরণ, চালককে বাতাস হতে রক্ষা, উইন্ডস্ক্রিন ওয়াশার, স্পিডোমিটার এবং স্পিড গভর্নর, শ্রবণযোগ্য সতর্কতা, চালকের নিয়ন্ত্রণ, টেকোগ্রাফ, স্টিয়ারিং হুইল, স্টিয়ারিং কলাম, চাপ/ ভ্যাকুয়াম সতর্কতা, বিল্ড আপ চাপ/ভ্যাকুয়াম, হাতের নিয়ন্ত্রণে যন্ত্রাংশ ঠিক রাখা, হ্যান্ড লিভার যান্ত্রিক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে, পায়ের ব্রেক ঠিক রাখা, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কিনা, যানবাহনের ব্রেক হাত দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা, হ্যান্ড লিভার যান্ত্রিক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে, পায়ের ব্রেক ঠিক রাখা, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে কিনা, চ্যাসিসের অবস্থা, বৈদ্যুতিক তারের এবং সরঞ্জাম, ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন মাউন্টিং, তেল এবং বর্জ্য ফুটো, জ¦ালানি ট্যাংক এবং সিস্টেম, নিষ্কাশন এবং বর্জ্য সিস্টেম, সাসপেনশন লিঙ্কেজ এবং পিভট, বসন্ত ইউনিট, স্টিয়ারিং লিঙ্কেজ, স্টিয়ারিং, পাওয়ার স্টিয়ারিং, ট্রান্সমিশন সিফট, অতিরিক্ত ব্রেক, ব্রেক অ্যাকুয়েটর, সামনের লাইট, পিছনের বাতি, বাধ্যতামূলক প্রতিফলক, দিক নির্দেশক, হেড ল্যাম্প, বাতি বন্ধ করণ ও ট্যাক্সি মিটার ইত্যাদি।
এদিকে এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জানান, ঢাকা শহরের সব ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তাতে সচেতনতার জন্য দুই মাসের সময় দেয়া হবে। তার মধ্যে যদি বন্ধ না হয় তাহলে অভিযান চালিয়ে সব গাড়ি উঠিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও ওসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আরও পড়ুন
পিছিয়ে থেকেও ফেরার গল্প লিখল বাংলাদেশ
লুকিয়ে রাখা বাচ্চা পৌঁছে দিলে ২০ হাজার ডলার দিব: তানজিন তিশা
টানা ৪১ দিন জামাতে নামাজ আদায়ে ১৭ কিশোর পেল বাইসাইকেল