দীর্ঘদিন লকডাউনের কবলে বন্ধ থাকার পর খুলেছে রাজধানীর মিরপুর বেনারসি পল্লির দোকানগুলো। কিন্তু গ্রাহক স্বল্পতা ও বিকিকিনি না থাকায় বেশ মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য।
তবুও বেনারসি শাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও কারিগররা বলছেন, ঈদের বাজারটা ধরতে পারলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে অনেকখানি। হাত ও তাঁতের বোনা এবং কারচুপির কাজের জন্য মিরপুর বেনারসি পল্লির শাড়ির কদর শুধু বাংলাদেশেই না বরং বিশ্বজুড়ে। প্রতিবছরই দেশের স্থানীয় গ্রাহকদের পাশাপাশি বিদেশি গ্রাহকেরাও ভিড় জমান মিরপুরের বেনারসি পল্লিতে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নিজেরা এসে বা দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন এখানকার শাড়ি, লেহেঙ্গা ও অন্যান্য পোশাক।
তবে, বিগত প্রায় তিন বছর ধরে দুরবস্থা যাচ্ছে বেনারসি পল্লির বাজারে। বর্তমানে মিরপুর ১১ নম্বর এবং অরিজিনাল ১০ নম্বর এলাকাজুড়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে চলছে এই বাজার। তবে, মেট্রোরেলের কাজ ও সড়ক সংস্কারের জন্য ২০১৮ সালে প্রথম মন্দার মুখ দেখে এই বাজার যা অব্যাহত থাকে ২০১৯ সালেও। পরবর্তীতে সড়ক উন্নয়ন হলেও ২০২০ সালে আসে কোভিড-১৯ করোনার আঘাত। সেবার দীর্ঘ লকডাউনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের বাজার হারাতে হয়েছে মিরপুর বেনারসি পল্লিকে। আর সেই ধারা অব্যাহত আছে চলতি বছরেও। গেল ৫ এপ্রিল থেকে চলমান লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এখানকার প্রায় দেড় শতাধিক দোকান। পল্লির মিরপুর ১১ নম্বর অংশে থাকা জিয়া সিল্ক হাউজের কর্ণধার বলেন, ১১ নম্বর এবং ১০ অংশ মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক দোকান আছে। এই দোকানের সঙ্গে শুধু আমরা ব্যবসায়ীরাই না বরং কর্মচারী এবং শাড়ি-লেহেঙ্গার কারিগররাও জড়িত। সাধারণ সময়ে ঈদুল ফিতরের সময় রমজানে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। কিন্তু বিগত দুই-তিন বছরে এমন ব্যবসার মুখ আর দেখছি না। মেট্রোরেলের কাজ ও সড়কের সংস্কারের জন্য ২০১৮ সাল থেকেই গ্রাহক কম। ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে দূর থেকে গ্রাহক আসছিল না। ২০১৯ এ কিছুটা ভালো ছিল। যখন ভাবছিলাম যে ব্যবসা হয়তো ভালো যাবে তখনই পরের বছর থেকে করোনা আর লকডাউনে সব বন্ধ। অনেক মহাজনই খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। অনেক কারিগর নতুন কাজের অর্ডার না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন। সম্প্রতি মিরপুর ১১ নম্বর অংশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ফলে এ এলাকায় বাইরে থেকে গ্রাহক এসে শপিং করবেন, সেই অবস্থা আর নেই। তবে, এতসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আশার আলো দেখছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, মার্কেট বা দোকান খোলার অনুমতি থাকলে ধীরে ধীরে হলেও ব্যবসা আবার বাড়বে।
মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় থাকা বাবুল শাড়ি বিতানের কর্ণধার বাবুল শিকদার বলেন, বাজার মন্দার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। এই বছরের বৈশাখের বাজার ধরতে পারিনি। ঈদের আগে দোকান খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। ঈদের মৌসুমে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানও থাকে। যদি লকডাউন না বাড়ায় এবং দোকানপাট খোলা থাকে তাহলে দুই ঈদের পাশাপাশি বিয়ের বাজার ধরতে পারলেও ক্ষতি অনেকখানি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
এছাড়াও মন্দার এই সময়ে অতিরিক্ত ভ্যাট মওকুফ চেয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এখানকার এক নারী উদ্যোক্তা মরিয়ম আক্তার বলেন, এমনিতেই ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না তার ওপর ভ্যাটের জন্য লোকজন এসে হয়রানি করে। আমরা খুব কষ্টে হয়তো দিনে কিছু গ্রাহক পাই। অনেক গ্রাহকই বাড়তি ভ্যাটের টাকা দিতে চান না। তখন এই টাকা আমাদের পকেট থেকে দিতে হয় তাও বিক্রি হোক এই কারণে। করোনা এর এই সময়ে ভ্যাট মওকুফ করা হোক এটা আমাদের দাবি। পাশাপশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন যে আমরা যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আমাদের সাহায্য করা হোক, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হোক। নাহলে আমাদের টিকে থাকাই মুশকিল হবে।
কোন কোন ব্যবসায়ী আবার বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডিজিটাল মাধ্যমে। অনলাইনে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি করছেন নিজেদের শাড়ি। নিজেরাই ই-কমার্স চালু করে অথবা অন্য কোন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সরবরাহ দিচ্ছেন নিজেদের শাড়ি।
শাড়ি ও লেহেঙ্গার স্থানীয় এক পাইকারি ব্যবসায়ী জামশেদ আলম বলেন, মিরপুর ১১ নম্বরে আমার ছোট একটা দোকান আছে। মূলত অন্যান্য বড় দোকানে আমরা শাড়ি সাপ্লাই (সরবরাহ) দেই; নিজেরা অল্প কিছু শাড়ি-লেহেঙ্গা খুচরা বিক্রি করি। আমরা এখানে শাড়ি-লেহেঙ্গা বানাই আবার ভারতের বেনারস ও কলকাতা থেকেও শাড়ি আনি। করোনার সময় থেকে সাপ্লাই কম থাকায় বিভিন্ন ই-কমার্সে শাড়ি এখন বেশি দিচ্ছি। বিশেষ করে অনেক নারী ব্যবসায়ী আছেন যারা ফেসবুকে শাড়ি বিক্রি করেন। এমন অনেকেই আমার থেকে শাড়ি নিয়ে যান। তবে পাইকারি ব্যবসার মতো এটায় কাটতি কম তাই লাভও কম। তবুও এভাবে করে হলেও মার্কেট একটু একটু করে চাঙ্গা হবে বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ