অনলাইন ডেস্ক :
অভিষিক্ত জাকির হাসানের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মোহাম্মদ সিরাজের বাউন্সারের ফাঁদ সামলে মারেন একের পর এক বাউন্ডারি। উমেশ যাদবের মতো অভিজ্ঞ পেসারকে বাধ্য করেন এক ওভারেই ভিন্ন তিন পরিকল্পনায় বোলিং করতে। সেই শান্তই পরে উইকেট বিলিয়ে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে। শান্তর মতো মনোযোগ না হারালেও কুলদিপ যাদবের বলে বারবার ছটফট করে নিজের বিপদ ডেকে আনেন লিটন দাস। অথচ দুজনের সামনেই ছিল বড় ইনিংস খেলার সুযোগ। জাকিরের আগে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান শান্ত। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে লিটনও গড়তে পারতেন বড় ইনিংস। কিন্তু অসময়ে আউট যান দুজনই। দুজনের অমন আউটে অসন্তুষ্ট কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতায় ৫১৩ রানের বিশাল লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। অসাধ্য সাধনের অভিযানে জাকিরকে নিয়ে ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন শান্ত। এ সংস্করণে ১৫ ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া শান্তই বেশি আধিপত্য দেখান এ জুটিতে। বিশেষ করে, চতুর্থ দিন সকালে সিরাজের একের পর এক বাউন্সারে নিয়ন্ত্রিত পুল শটে ফুটে উঠছিল তার আত্মবিশ্বাস। উমেশ আক্রমণে যোগ দেওয়ার পরও মনোযোগ নড়েনি শান্তর। অন্য প্রান্তে জাকিরও নির্ভরতা দিলে ম্যাচের একমাত্র উইকেটশূন্য সেশনের দেখা মেলে। দিনের দ্বিতীয় সেশনের শুরুর দিকেই ঘটে বিপত্তি। উমেশের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে তিনি ব্যাট বাড়িয়ে দেন শান্ত। স্লিপ থাকা অবস্থায় যে শটের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। স্লিপ ফিল্ডার বিরাট কোহলি বল ছেড়ে দিলেও কাছে দাঁড়ানো রিশাভ পান্ত দারুণ দক্ষতায় সেটি গ্লাভসে জমা করেন। ৬৭ রানে থামে শান্তর ১৭৯ মিনিটের ইনিংস। শান্তকে প্রবল সমালোচনার মধ্যে বরাবরই তার পাশে দাঁড়িয়ে ভরসার কথা বলেছেন ডমিঙ্গো। তবে এই আউটে তিনি বিরক্ত। প্রথম ইনিংসে শান্তর প্রথম বলে আউট হওয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই কোচের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে থিতু হওয়ার পর তার কাছে কোচের চাওয়া ছিল আরও বেশি। “সে যেভাবে আউট হয়েছে, তাতে আমি হতাশ। ৬০ রানের ইনিংস দিয়ে কখনও টেস্ট জেতা যায় না। প্রথম বলে আউট যে কেউ হয়ে যেতে পারে। টেস্ট ম্যাচে ওপেনার প্রথম বলে আউট হতেই পারে। এটিই খেলার ধরন। তাই আমি তার প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের আউটে বেশি হতাশ।” “বড় স্কোর করার ভালো একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে সে। একইভাবে দলে নিজের জায়গাও পাকাপোক্ত করে ফেলতে পারত। আমার মতে, যে কেউই আউট হতে পারে। তবে আউট হওয়ার ধরনও মাঝেমধ্যে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলে। শান্ত ফেরার পর ইয়াসির আলি চৌধুরিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। চার নম্বরে নামা লিটন শুরুতে কিছুটা সময় নেন। সিরাজ, আকসার প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের বলে তেমন রান না পেলেও তাকে পরীক্ষা দিতে হয়নি। কিন্তু কুলদিপ আক্রমণে আসতেই অধৈর্য্য হয়ে পড়েন লিটন। শুরুতে একবার এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন থেকে বেঁচে যান তিনি। পরে চেষ্টা করেন উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে। একটি বল তার ব্যাটের কানায় লেগে অল্পের জন্য স্লিপের ওপর দিয়ে চলে যায়। তবে ঠিক একইভাবে এই ওভারেই ফের বড় শটের চেষ্টায় মিড অন ও লং অনের মাঝামাঝি জায়গায় ধরা পড়েন বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। অথচ তখন চা বিরতির বাকি ছিল তিন ওভারেরও কম। এমন সময়ে কঠিন চাপে থাকা দলকে আরও বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরা লিটনকে নিয়ে আক্ষেপ ফুটে ওঠে বাংলাদেশ কোচের কণ্ঠে। উদাহরণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় ব্যাটসম্যানদের কথা “লিটনের আউটের ধরনে আমি হতাশ হয়েছি। বিশেষ করে আউট হওয়ার সময়টার কারণে। চা বিরতির তখন ¯্রফে ৬ মিনিট বাকি ছিল। সে খুব ভালো ক্রিকেটার। আমি নিশ্চিত সে নিজেও হতাশ হয়েছে।” “আমি কখনও বিরাট (কোহলি), (জো) রুট, (স্টিভেন) স্মিথ অথবা মার্নাসকে (লাবুশেন) এভাবে আউট হতে দেখিনি। বিশেষ করে বিরতির এত কাছে গিয়ে। আমাদের কাছে লিটন তাদের মতোই ভালো ক্রিকেটার। আমি সত্যিই মনে করি, সে এত ভালো ক্রিকেটার। সে নিজেও হয়তো হতাশ হয়েছে। আমিও হতাশ হয়েছি লিটন যেভাবে গত শনিবার আউট হয়েছে।”
আরও পড়ুন
ব্রাজিল বিশ্বকাপ, অলিম্পিকের হাতছানি ঋতুপর্ণাদের
ব্যাটিংয়ে দুর্দশা নিয়ে যা বললেন বুলবুল
মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপের মূলপর্বের পথে বাংলাদেশ