জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছে দরিদ্র পরিবারের সন্তান নিশাত আক্তার (১৮)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী দরিদ্র বাবার পক্ষে নিশাতের পড়ালেখা চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না ঠিক তখনই সে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং নিজের পড়ালেখা চালিয়েছে। তাঁর এই ফলাফলের পিছনে বাবা- মা ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল অনেক। দরিদ্রতার সাথে নানা লড়াই করে সে আজ সফল হয়েছে।
উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের গুতুমপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মোঃ হান্নান মিয়া ও গৃহিণী নাজমা বেগমের দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে নিশাত সবার বড়। সে স্থানীয় রাঙ্গিছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে জিপিএ ৩.৭৮, লক্ষীপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে ৪.৫০ ও এসএসসিতে ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। নিশাতের দুই বোনের মধ্যে আয়েশা আক্তার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণী ও ছোট বোন মাইশা আক্তার লক্ষীপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।
নিশাত জানায়, প্রতিদিন সে গড়ে ৮-৯ ঘন্টা পড়ালেখা করতো। অভাব-অনটনের সংসারে টাকার জন্য কোনদিন প্রাইভেট পর্যন্তও পড়েনি। পরিবারের বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় তাঁর এই সাফল্য এসেছে। প্রাইমারী থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে তাকে অনেক চড়াই-উৎড়াই পার করতে হয়েছে। পড়াশোনা নিয়মিত চালিয়ে যাবার জন্য সে টিউশনি করেছে। টিউশনি থেকে যে টাকা পেত সেটা দিয়ে তার পড়ালেখা ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহে বাবাকে সহযোগিতা করতো। বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কলেজ থাকায় সে নিয়মিত পায়ে হেঁটে কলেজ যেত। নিশাত আরো জানায়, আমি এখন আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য একটা কিছু করতে চাই। আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
নিশাতের বাবা দিনমজুর হান্নান মিয়া জানান, দিনমজুরের কাজ করে কোনমতে সংসার চালাই। পরিবারের আর্থিক অবস্থা একদম শোচনীয়। পৈত্রিক সাড়ে তিন শতক জমির ওপর আমার ছোট্ট এই কুঁড়েঘরে তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছি। যখন যে কাজ পাই তখন সেটা করি। তারপরও তিন মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করাইনি। আমার মেয়ের ইচ্ছে, সে আইন বিষয়ে পড়তে চায়। কিন্তু বাবা হিসেবে আমি তার উচ্চশিক্ষার জন্য এত টাকা খরচ করা সম্ভব হচ্ছেনা। যদি সরকার কিংবা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তাহলে আমার মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হবে।
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতাউর রহমান বলেন, নিশাত আমাদের কলেজের অদম্য একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। যদি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান নিশাতের পাশে এগিয়ে আসেন তাহলে আমার বিশ্বাস সে একদিন ভালো আইনবিদ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী নিশাতের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করা হবে।
আরও পড়ুন
দাগনভূঞায় দূর্গোৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে দুঃস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে মেজবাহ্ সাঈদ
শেরপুর ও ময়মনসিংহে আকস্মিক বন্যা, তলিয়ে গেছে ১৬৩ গ্রাম
ময়মনসিংহে মোবাইল বিস্ফোরণে চিকিৎসকের মৃত্যু