নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিন্ডিকেটের থাবায় মালয়েশিয়াগামী আকাশপথের যাত্রীরা দিশেহারা। বর্তমানে বিমানের টিকেট নিয়ে চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য। হু হু করে বাড়ছে দাম। ইতোমধ্যে আকাশচুম্বী হয়েছে বিমানসহ কিছু এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম। পর্যাপ্ত টিকিট থাকার পরও অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে টিকিটের দাম। ২৪ হাজার টাকার টিকেট গিয়ে ঠেকেছে এখন ৭০ হাজার টাকায়। সিন্ডিকেট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে টিকেটের দাম। তদারকি ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে বিমানসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের টিকেট এখন দুষ্প্রাপ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গুটিকয়েক এয়ারলাইন্স অত্যন্ত কৌশলে সিন্ডিকেট তৈরি করে সব টিকিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের কাছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া হাকাচ্ছে। কোথাও তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আগে যেখানে এক হাজার থেকে ১২শ’ রিঙ্গিতে মালয়েশিয়া-ঢাকা রুটে রিটার্ন টিকিট পাওয়া গেলেও এখন গুনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার রিঙ্গিত। তাতেও মিলছে না টিকিট। বিমানের টিকিট সংকটের কারণে ওই দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার গতি কমছে। নতুন করে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া শুরু হওয়ার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসেই গিয়েছেন পৌনে ২১ হাজার শ্রমিক। ঢাকা-কুয়ালালামপুরগামী ওয়ানওয়ে একটি টিকিটের দাম যেখানে ২৫ হাজার টাকা ছিল, সেই টিকিটের দামই এখন ৭০ হাজার টাকা দিয়েও কেনা যাচ্ছে না। আবার আগামী এক মাস পর্যন্ত ওই রুটে কোনো টিকিট নেই। যাত্রীর চাহিদার কারণে চাপ আছে। এখন যদি কেউ এক লাখ টাকাও টিকিট বিক্রি করে তাতেও কেউ বাধা দেবে না। সেজন্যই টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, মালিন্দো এয়ার ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চালাচ্ছে। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক, স্টুডেন্টসহ অন্য পেশার লোকজনের চাহিদা থাকায় টিকিটের সংকট তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে বিমান নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো তিনটি ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওসব ফ্লাইট বোয়িং-৭৭৭ দিয়ে চলছে। তার সিট ক্যাপাসিটি ৪১৯। ওসব ফ্লাইটের টিকিট সিস্টেম ওপেন করার ৫ মিনিটের মধ্যে টিকিট নাই হয়ে যাচ্ছে। মূলত টিকিট সিস্টেমে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এজেন্সিগুলো টিকিট কেটে ফেলছে। ফলে মালয়েশিয়া রুটে বিমানের ভাড়া এতই বেড়ে গেছে যে অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারছে না। অনেকে আবার দেশে এসে বিপাকে পড়ছে। অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার কারণে তারা কর্মস্থলে ফিরতে পারছে না। অভিবাসীদের অভিযোগ, এয়ারলাইন্সগুলো প্রবাসীদের পকেট কাটছে। মালয়েশিয়া রুটে পর্যাপ্ত ফ্লাইট না থাকার সুযোগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের মতো করে টিকিট ব্লকের জমাজমাট বাণিজ্য করছে। ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ আশপাশের কোনো দেশের ভাড়া বাড়লেও বাংলাদেশে আকাশচুম্বী বেড়েছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে আটাব সভাপতি এসএন মনজুর মোর্শেদ মাহবু জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের মতো বিমানের টিকিটও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। যার কারণে শ্রমিক পাঠানোর জন্য এজেন্সিগুলো নির্ধারিত দামের তিন গুণ টাকায় টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এখন আবার টাকা দিয়েও টিকিটই পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নয়, অন্য এয়ারলাইন্সেরও একই অবস্থা। এ বিষয়ে তদন্ত করে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়তেই থাকবে। সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম জানান, এখন জিডিএস সিস্টেমে টিকিট বিক্রি হয়। চাইলেও কেউ ম্যানুয়ালি কিছু করতে পারে না। ফলে বেজড ফেয়ার কমে শুরু হলেও শেষের দিকে সেটা বেড়ে যাবেই। এটা শুধু বিমানে নয়, বিশ্বব্যাপীই এ সিস্টেমে চলছে। ডিমান্ড বাড়লে দামও বাড়ে। এটাই এভিয়েশন মার্কেটিংয়ের পলিসি। এখানে করার কিছুই নেই। এখন তো আর কেউ টিকিট নিয়ে দুর্নীতি করছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়মিত ফ্লাইটের বোয়িং-৭৩৭ পাশাপাশি বোয়িং-৭৭৭ দিয়ে অতিরিক্ত আরো ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এয়ারলাইন্সগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি দাম আগে বেড়েছিল। কিন্তু এখন কমছে। সে হিসেবে এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া কমানোর সুযোগ আছে। তবে বিমান যদি কমাতো তাহলে আমরা কমানোর জন্য অন্যান্যের বলতে পারতাম।
আরও পড়ুন
গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনা নিহত বেড়ে ৮০০
শাকিবের ডাকে হাজির যেসব তারকা
ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ রোগী