অনলাইন ডেস্ক :
সত্যিই কি ম্যাজিক? মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজে তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবু অনেকের বিশ্বাস, নিশ্চয়ই কোনো জাদুর কাঠি আছে অধিনায়ক মাশরাফির। মাঠের ক্রিকেট যারা খেলেন, তারা যদিও জানেন, এখানে জাদু বলে কিছু নেই। এই যেমন ইমরুল কায়েস। মাশরাফির পর বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক তিনিই। সেই ইমরুল বলছেন, মাশরাফির কোনো জাদু নেই, তবে আছে নেতৃত্বের বিশেষ গুণ। পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি। বিপিএলেও তিনিই সেরা। আগের আট আসরে চারটিতেই ট্রফি উঠেছে তার হাতে। এবার সিলেটের প্রথম কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে সিলেট স্ট্রাইকার্স বিপিএলের ফাইনালে উঠেছে মাশরাফির নেতৃত্বেই। কাগজে-কলমে বেশ পিছিয়ে থাকা দলটি লিগ পর্ব শেষ করেছে সবার ওপরে থেকে। এরপর শীর্ষ চার থেকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের আসা-যাওয়ার পালায় আরও শক্তিহীন হয়ে পড়ে দলটি। কিন্তু শক্তিতে বেশ এগিয়ে থাকা রংপুর রাইডার্সকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে। ‘ম্যাশ-ম্যাজিক’ ধারণাও তাতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় আরও। রংপুরকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য মাশরাফি সাফ বলে দেন, “ম্যাজিক বলে কিছু নেই, সব আল্লাহর রহমত।” পরদিন একই কথা বললেন ইমরুলও। ২০১৫ সালে মাশরাফির অধিনায়কত্বেই খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম শিরোপা জেতেন ইমরুল। এ ছাড়া জাতীয় দলেও মাশরাফির নেতৃত্বে খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি অধিনাঢক মাশরাফির বিশেষত্ব তুলে ধরলেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। “ক্রিকেট আসলে দলগত খেলা, এখানে ম্যাজিক বলে কোনো কথা নেই। দলের ঐক্য যদি ভালো থাকে, দল যদি ভালো খেলতে থাকে, তাহলে ভালো ফলাফল সম্ভব। অনেকে অনেক বড় মাপের দল করেও কিন্তু ফলাফল আসে না। কারণ দলের মাঝের পরিবেশ ভালো থাকে না। মাঠে গিয়ে শুধু খেলতে হয়… দলের যে বন্ধন, তা ঠিক থাকে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আমি মনে করি।” “মাশরাফি ভাই যে দলেই খেলুক না কেন, এই জিনিসটা খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। দলের সবাইকে নিয়ে থাকেন, দলের সবার বন্ধনটা ভালো রাখেন। আমরাও চেষ্টা করি আমাদের দলের পরিবেশ ভালো রাখার। এটাই ওঁর হয়তো ম্যাজিক বলা যায়। উনি সবসময় তাদের তরুণ বা বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে থাকেন। এই জিনিসটা উনি উপভোগ করেন। এটা হয়তো ভালো করার মূল বিষয়।” বিপিএলে মাশরাফির পরই সফলতম অধিনায়ক ইমরুল। তার নেতৃত্বে নিজেদের সবশেষ দুই শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। তাহলে ইমরুলেরও কি ম্যাজিক আছে? তার কণ্ঠে শোনা গেল মাশরাফির কথারই প্রতিধ্বনি, “না! আমার কোনো ম্যাজিক নেই। ওপরওয়ালা আছেন।” ম্যাজিকের আলোচনা এক পাশে রাখলে ক্রিকেটীয় বোধেও মাশরাফির দক্ষতার ছাপ দেখা যায় অনেক। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচেই যেমন, নিজে ব্যাটিংয়ে ওপরে নেমে যাওয়া অথবা শেষ দিকে তানজিম হাসান সাকিব ও লুক উডকে দারুণভাবে ব্যবহার করে ম্যাচ বের করে আনার পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সিলেট অধিনায়ক। পুরো আসরেই তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি মুশফিকুর রহিম, রুবেল হোসেনদের মতো অভিজ্ঞদের নিয়ে কার্যকর নেতৃত্বে একের পর এক ম্যাচ জিতেছেন মাশরাফি। ইমরুলও মানছেন মাশরাফির সেই কৃতিত্ব। তবে সিলেটের বিপক্ষে ফাইনালে নামার আগে এসব নিয়ে আলাদা করে ভাবতে চাচ্ছেন না কুমিল্লার অধিনায়ক। “প্রতিটি দলেই একজন অধিনায়ক থাকেন এবং প্রতিটি দলেরই একটা পরিকল্পনা থাকে যে, আমার দলকে আমি কীভাবে চালাব। মাশরাফি ভাই ওঁর দলকে খুব ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। যে কারণেই হয়তো ওঁদের দল ফাইনালে এসেছে। আমাদের দলেরও একটা পরিকল্পনা আছে বা সবার ইচ্ছে আছে আমরা কীভাবে ফাইনাল ম্যাচটা খেলব। ওইরকম যে ভিন্ন কিছু হবে, ওইরকম আমার মনে হয় না। খেলি না…!”
আরও পড়ুন
চমক দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা, বাদ সাকিব-লিটন
স্বপ্ন পূরণের ‘প্রেরণাদাতা ও যোদ্ধা’ তামিম বললো: বিসিবি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন তামিম ইকবাল