নিজস্ব প্রতিবেদক:
রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। রমজানের পণ্য নিয়ে বন্দরে ভিড়ছে একের পর এক জাহাজ। ইতোমধ্যে ছোলা ও ডাল চাহিদার চেয়ে বেশি এবং পর্যাপ্ত চিনি ও খেৎুর দেশে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত সয়াবিন কিছুটা কম এলেও ভোজ্যতেলের জাহাজও পাইপলাইনে আছে। গত বছরের শেষ দিকে যেসব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিল সেগুলো ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এখন জানুয়ারিতে যেসব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিল সেসব পণ্য আসছে। রমজানের আগেই পাইপলাইনে থাকা বাকি পণ্য দেশে এসে পৌঁছাবে। আর বিপুল পণ্য আমদানিতে বর্তমানে পাইকারি কিছু পণ্যের দাম বাড়তি থাকলেও রমজানের আগেই তা পড়ে যেতে পারে। ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বছরে দেড় টন ছোলার চাহিদা থাকলেও রমজানেই পণ্যটির চাহিদা ১ লাখ টন। ওই চাহিদার বিপরীতে ইতোমধ্যে প্রায় ২ লাখ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। আর দেশে ৪ হাজার ৬০০ টন উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চাহিদার চেয়ে বেশি ছোলা মজুত থাকলেও গত দুই মাসে কয়েক দফায় পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ছোলা ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি কম হলেও ভারত থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ছোলা দেশে ঢুকছে। পাইকারি মোকামে ভালো মানের ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশে এবার মসুর ডাল আমদানির রেকর্ড গড়েছে। গত ৬ মাসে প্রায় আড়াই লাখ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। যা ২০২১ সালের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। তারপরও বাজারে মসুর ডালের দাম বাড়তি। আন্তর্জাতিক বাজারেও মসুর ডালের দাম ক্রমাগত কমলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রত্যাশিত সুফল নেই। বছরে দেশে মসুর ডালের চাহিদা ৬ লাখ টন। তার মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন দেশেই উৎপাদন হয়। বাকি প্রায় চার লাখ টন আমদানি করা হয়। বছরজুড়ে মসুর ডালের চাহিদা মাসে ৪০ হাজার টন থাকলেও রমজানের এক মাসে চাহিদা বেড়ে এক লাখ টনে দাঁড়ায়। গত দুই মাসে দেশে এসেছে আরো প্রায় ২৫ হাজার টন মসুর ডাল। মসুর ডালের একাধিক জাহাজও পাইপলাইনে আছে। তারপরও বাজারে কমছে মসুর ডালের দাম কমছে না। পাইকারী মোকামে এখন মসুর ডাল সর্বনিম্ন ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগের চেয়ে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা দাম বেড়েছে। তাছাড়া দেশে সারাবছর প্রায় এক লাখ টন খেজুরের চাহিদা থাকে। আর শুধু রমজানে ওই চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টন। ইতোমধ্যে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত খেজুর দেশে পৌঁছেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯১ হাজার ৯০৪ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। তবে এই অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছে। তবু রোজা ঘিরে খেজুরের দাম আগেভাগেই বেড়ে গেছে। ৫ কেজির কার্টনে খেজুরের দাম ২০০ থেকে ৭০০ টাকারও বেশি বেড়েছে। সূত্র আরো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে চিনির মোট চাহিদা থাকে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন। দেশে আখ থেকে চিনির উৎপাদন ৩০ হাজার টন আর বাকিটা আমদানি করেই মেটানো হয়। প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজানে বেড়ে তিন লাখ টন হয় চিনির চাহিদা। এতোমধ্যে দেশে চাহিদার কাছাকাছি চিনি আমদানি হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি কিছুটা কম থাকলেও গত দুই মাসে আগের চেয়ে বেড়েছে চিনির সরবরাহ। আর দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি হয়। রমজানে প্রায় ৩ লাখ টন তেলের চাহিদা থাকে। তবে তার বেশিরভাগই পাম অয়েল। এবার পরিশোধিত পাম অয়েল রেকর্ড আমদানি হয়েছে। ২০২২ সালের ৬ মাসে সাড়ে ৯ লাখ টন আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪৩ শতাংশ বেশি। আর গত নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসে দেড় লাখ টন পাম অয়েল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এদিকে রমজানের পণ্য প্রসঙ্গে দেশের বৃহতম পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, রমজান ঘিরে দেশে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। পাইপলাইনে থাকা পণ্য যদি রমজানের আগে বাজার ধরতে পারে, তাহলে কোনো সঙ্কট তৈরি হবে না। যেসব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে, সেগুলো যাতে ডলার নিয়ে সংকটে না পড়ে সেদিকে মন্ত্রণালয়কে খেয়াল রাখতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে রমজানে পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, রমজান ঘিরে দেশে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য এসেছে। রমজানের পণ্য নিয়ে এখন আর কোনো শঙ্কা নেই। পাইপলাইনে আছে আরো বিপুল পরিমাণ পণ্য। রমজানের আগে সেসব পণ্যও এসে পৌঁছাবে। ডলার নিয়ে যে সংকট ছিল তাও কেটে যাচ্ছে। আশা করা যায় রমজানে হাতের নাগালে থাকবে ভোগ্যপণ্যের দাম।

আরও পড়ুন
সোমবার থেকে আমানতের অর্থ ফেরত পাবেন পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ন্যান্সির গান ‘নেতা আসছে’
বিপিএল শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানায় বিসিবি, দায়িত্বে হাবিবুল বাশার