দুই শিশু মেয়েকে ফিরে পেতে জাপানের টোকিও থেকে ঢাকায় এসে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জাপানের নাগরিক নাকানো এরিকো। হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট দুই শিশুকে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুফুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগেই ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার বিকেলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক এ তথ্য জানান নিশ্চিত করেছেন ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ১০ ও ১১ বছর বয়সী ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করেছে। তাদের সিআইডির হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হবে।
এর আগে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুফাকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি রীতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তাদের তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০)ও সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। একই মাসের ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে ওই মাসের ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর নিকট থেকে তার বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মাদারী চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের আর্জি জানিয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে তাকে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সাথে তার দুই মেয়ের সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেন। অন্যদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দুই মেয়ের কথোপকথন ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালত গত ৩১ মে এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লাইলার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেননি। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই তারিখে এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তবে ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে কোভিড পরীক্ষা করান যার ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান তার সাথে সন্তানদের দেখা করাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সন্তানদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও তা ছিল হৃদয়বিদারক ঘটনা। গত ২৭ জুলাই এরিকোকে তার মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখবাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেয়া হয়। তাই আইনি প্রতিকারের আশায় হাইকোর্টে দুই মেয়ের জিম্মা চেয়ে রিট দায়ের করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো।
আরও পড়ুন
৪ দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে উর্দুভাষীরা
শীতে রোগমুক্ত জীবন পেতে সাহায্য করবে যেসব ভেষজ
অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহামায়া লেক