September 16, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 30th, 2023, 8:06 pm

জাদেজার ছক্কা-চারে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই

অনলাইন ডেস্ক :

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। সেখানেও রোমাঞ্চের কমতি হলো না। দুর্দান্ত প্রথম চার ডেলিভারিতে গুজরাট টাইটান্সকে শিরোপার হাত ছোঁয়া দূরত্বে নিয়ে গেলেন মোহিত শর্মা। তবে শেষ দুই বলে ১০ রানের সমীকরণে পরপর ছক্কা ও চার মেরে গুজরাটের মুঠো থেকে জয় বের করে নিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। রুদ্ধশ্বাস জয়ে পঞ্চমবারের মতো আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হলো চেন্নাই সুপার কিংস। শিরোপা লড়াইয়ে সোমবার মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে জিতেছে ৫ উইকেটে। আইপিএল ফাইনালে সর্বোচ্চ ২১৪ রানের পুঁজি গড়ে গুজরাট। বৃষ্টিতে চেন্নাইয়ের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫ ওভারে ১৭১। কাক্সিক্ষত ঠিকানায় পৌঁছে যায় তারা শেষ বলে।

শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৩ রান। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত বল করা পেসার মোহিত প্রথম চার বলে দেন তিনটি ইয়র্কার ও একটি লো-ফুল টসে করে রান দেন কেবল ৩। পঞ্চম বল ইয়র্কারের চেষ্টায় সামান্য গড়বড় হয়ে যায়, স্লটে পেয়ে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান জাদেজা। শেষ বল জাদেজার পায়ের ওপর নিচু ফুল টস, ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে ব্যাট উঁচিয়ে খ্যাপাটে দৌড়ে বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের রেকর্ড স্পর্শ করল চেন্নাই, দুই দলেরই পাঁচটি করে। অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মার ৫ শিরোপাও স্পর্শ করলেন ধোনি। টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আশা চুরমার হয়ে গেল গুজরাটের। সময়ের হিসাবে ফাইনাল শেষ হলো তিন দিনে! বৃষ্টির কারণে রোববার নির্ধারিত দিনে টসই হতে পারেনি। ম্যাচ গড়ায় পরদিন রিজার্ভ ডেতে।

এখানেও চেন্নাইয়ের রান তাড়ার শুরুতে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। আবার খেলা শুরু হয় প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর। আর ম্যাচ যখন শেষ হলো, স্থানীয় সময় তখন রাত দেড়টা! ঋদ্ধিমান সাহার ৩৯ বলে ৫৪ ও সাই সুদর্শনের ৪৭ বলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে রেকর্ড পুঁজি গড়ে গুজরাট। রান তাড়ায় রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ের ৭৪ রানের বিস্ফোরক উদ্বোধনী জুটির পর কয়েকটি ক্যামিও ইনিংসে শিরোপার হাসি হাসল চেন্নাই। ৬ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান করে শেষের নায়ক জাদেজা। শিবাম দুবে ২১ বল ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দুই ওভারে গুজরাটের রান ছিল কেবল ৮। এর মাঝে আউট হতে পারতেন শুবমান গিল, কিন্তু তার ক্যাচ ফেলেন দিপক চাহার। ৩ রানে জীবন পেয়ে তুষার দেশপান্ডের পরের ওভারে টানা তিনটি চার মেরে এগিয়ে যান গিল।

টানা তিনটি চার মারেন স্পিনার মাহিশ থিকশানাকেও। চার ইনিংসের মধ্যে তিন সেঞ্চুরির পর এবার যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ধোনির ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ২০ বলে ৭ চারে ৩৯ রান করে। গিল আসর শেষ করলেন ৮৯০ রান নিয়ে। আইপিএলে এক আসরে তার চেয়ে বেশি রান আছে কেবল বিরাট কোহলির (২০১৬ সালে ৯৭৩)। আইপিএলে নিজের ২৫০তম ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩০০ ডিসমিসালের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ধোনি। সপ্তম ওভারে ৬৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙার পর আরেক ওপেনার ঋদ্ধিমান দলকে এগিয়ে নেন সুদর্শনকে সঙ্গী করে। ঋদ্ধিমান ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৬ বলে। এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেননি তিনি (৩৯ বলে ৫৪)। প্রথম ৯ বলে সুদর্শনের রান ছিল ৬। এরপর আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। থিকশানার তিন বলের মধ্যে দুই ছক্কার পর তরুণ ব্যাটসম্যান ফিফটি করেন ৩৩ বলে।

এরপর দেশপান্ডের টানা চার বলে মারেন তিনটি চার ও একটি ছক্কা। ৮৪ রান নিয়ে শেষ ওভার শুরু করেন তিনি। মাথিশা পাথিরানার প্রথম দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জাগান সেঞ্চুরির সম্ভাবনা। কিন্তু পরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ২ ছক্কায় ১২ বলে ২১ রান করে। ইনিংস বিরতির সময় বৃষ্টি নামলেও দ্রুতই থেমে যায় তা। তবে চেন্নাইয়ের ইনিংসে ৩ বল হতেই ঝুম বৃষ্টি নামে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নতুন লক্ষ্যে রুতুরাজ ও কনওয়ে শুরুটা করে দারুণ। প্রথম ৪ ওভারে চেন্নাই তুলে ফেলে ৫২ রান। এর মধ্যে রশিদ খানের প্রথম ওভারে আসে ১৭। আরেক আফগান স্পিনার নূর আহমাদ সপ্তম ওভারে ফিরিয়ে দেন দুই ওপেনারকেই। ক্যাচ তুলে দেন দুজনই। রুতুরাজের বিদায়ে (১৬ বলে ২৬) ভাঙে ৭৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। কনওয়ে ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ৪৭ রান।

চেন্নাইয়ের রানের গতিতে দম দেন অজিঙ্কা রাহানে। প্রথম ১১ বলে তিনি করেন ২৬। শেষ ৩০ বলে তার দলের প্রয়োজন পড়ে ৬০ রান। এরপরই আক্রমণে এসে রাহানেকে (১৩ বলে ২৭) ফিরিয়ে দেন মোহিত। পরের ওভারে প্রথম চার বলে ৩ রান দেওয়া রশিদকে শেষ দুই বলে ছক্কায় ওড়ান দুবে। রশিদ ৩ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। শেষ ৩ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ৩৯। এবার মোহিতের প্রথম তিন বলে দুই ছক্কা ও একটি চার মারেন আম্বাতি রায়ডু। পরের দুই বলে আউট যথাক্রমে রায়ডু ও ধোনি। হ্যাটট্রিক বলে সিঙ্গেল নেন জাদেজা। ২ ওভারে দরকার ২১। পরের ওভারে কেবল ৮ রান দিয়ে গুজরাটকে ম্যাচে রাখেন শামি। শেষ ওভারে দারুণ শুরুর পর শেষে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন মোহিত। জাদেজার বীরত্বে উল্লাসে মাতল চেন্নাই।
গুজরাট টাইটন্স: ২০ ওভারে ২১৪/৪ ( ঋদ্ধিমান ৫৪, গিল ৩৯, সুদর্শন ৯৬, পান্ডিয়া ২১*, রশিদ ০*; চাহার ৪-০-৩৮-১, তুষার ৪-০-৫৪-০, থিকসানা ৪-০-৩৬-০, জাদেজা ৪-০-৩৮-১, পাথিরানা ৪-০-৪৪-২)
চেন্নাই সুপার কিংস: (১৫ ওভারে লক্ষ্য ১৭১) ১৫ ওভারে ১৭১/৫ (রুতুরাজ ২৬, কনওয়ে ৪৭, দুবে ৩২, রাহানে ২৭, রায়ডু ১৯, ধোনি ০, জাদেজা ১৫* শামি ৩-০-২৯-০, পান্ডিয়া ১-০-১৪-০, রশিদ ৩-০-৪৪-০, নুর ৩-০-১৭-২, লিটল ২-০-৩০-০, মোহিত ৩-০-৩৬-৩)
ফল: চেন্নাই সুপার কিংস ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভন কনওয়ে
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: শুবমান গিল