জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টির কারণে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জলমগ্ন সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলছে যানবাহন ও মানুষজন। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এ বছর সিলেটে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, রোববার (২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬১ মিলিমিটার এবং ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৫.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সজীব হোসাইন জানান, আগমী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া পরবর্তী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয় আগামী ৪৮ ঘণ্টা এবং পরবর্তী ৫ দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
ইতিমধ্যে সিলেটের ১৩ টি উপজেলার স্থানীয় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সবকটি উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকার বাড়ীঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নতুন করে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের দামারী নামক স্থানে অর্ধ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন পানবন্দী।
গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) ভোর থেকে আবারো টানা স্থানীয় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা যেন তীলে তীলে গ্রাস করছে সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উনাই হাওরে নির্মানাধীন ব্রিজ, বঙ্গবীর ট্রানিং ও তোয়াকুল ব্রীজ নির্মানে ধীরগতি থাকায় তোয়াকুল, নন্দিরগাঁও রুস্তমপুর,পশ্চিম জাফলং, সদর, পূর্ব জাফলং ও মধ্য জাফলং ইউপির সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সালুটিকর – গোয়াইনঘাট সড়ক বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে জরুরি কাজে উপজেলা সদরে আসতে কেউ কেউ ইঞ্জিন নৌকা ব্যবহার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিভিন্ন ইউনিয়নের হাওরাঞ্চলের হাজারও মানুষ রয়েছেন পানি বন্দী। এছাড়াও উনাই হাওরে বাইপাশ সড়ক নিমজ্জিত থাকায় ঐ এলাকার বাজার গুলোতে নিত্য পণ্যে সরবরাহে বিঘ্নিত ঘটছে। ফলে জনসাধারণের দূর্ভোগ চরমে। একদিকে পানিবন্দী অন্যদিকে মানুষের কর্মসংস্থান না থাকায় দিনমজুর শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন ফলে কাটছে মানবেতর দিন। হাওর বেষ্টিত গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবার তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে রয়েছেন শংঙ্কায়। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপদের শংঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
উপজেলা ত্রান ও দূর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) শীর্ষেন্দূ পুরকাস্থ বলেন, সরকার প্রদত্ত আমাদের পর্যাপ্ত ত্রান রয়েছে, উপজেলা জুড়ে ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকারী (রেসকিউ) টিম রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা আছে।
তবে গেল বছরের ভয়াবহ বন্যার আতংকে এ বছরও শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, সিলেটে কয়েক দিন ধরে দিনের বেলা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে সকালের দিকে নদ-নদীর পানি কম থাকছে, সন্ধ্যার দিকে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে সিলেটের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।
তবে বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, জুলাই মাসে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ দেশের ওলামাদের নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছে —রংপুরে শামসুজ্জামান দুদ
রংপুরে এক্্র ক্যাডেটস্্ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
কোম্পানীগঞ্জে অস্ত্রসহ ব্যবসায়ীকে আটক করলো সেনাবাহীনী