নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের কার্যক্রমে বাজারে তেমন প্রভাব ফেলছে না। মূলত অতি মুনাফাসহ কিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনের দুর্বলতার কারণে একদিকে যেমন বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও মনিটরিং টিমকে সহযোগিতা করছে না। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭২০টির বেশি বাজারে পরিদর্শন চালানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে তাতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজারের দোকানগুলোতে পণ্যমূল্য যথাযথভাবে টাঙানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয় না। বিক্রেতারাও মনিটরিং কাজে যথাযথ সহযোগিতা করেন না। এমনকি মনিটরিং টিম দেখলে বিক্রেতারা দোকান বন্ধ করে চলে যান। অনেকে পণ্যের এলসি ব্যয় ও ক্রয়মূল্যও দেখাতে চান না। অনেকেই অতিরিক্ত মুনাফা করলেও আইনি বাধায় জোরালো শস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। এ ছাড়া তুলামূলক দূরবর্তী বাজারে মনিটরিংয়ের জন্য সদস্যরা যেতে চান না। আবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জরুরি কাজ থাকলে আগে থেকে অবহিত করেন না। এতে পরিদর্শন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এসব কারণে বাজার মনিটরিংয়ের কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, আমদানির তুলনায় খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যে পার্থক্য অনেক বেশি। কৃষিপণ্যের উৎপাদন মূল্যের চেয়ে খুচরা দরেও একই পরিস্থিতি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে তার প্রতিফলন নেই। তবে বাজার মনিটরিং ইতোমধ্যে কিছুটা ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি কলেও জনবলের ঘাটতি থাকায় প্রতিনিয়ত দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং কার্যক্রম যথাযথবাবে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে পণ্যের বাজারে মূল্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য অপরাধে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জারিমানার বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের অপরাধে ভোক্তা অধিকার মামলা করলে আদালত ২ লাখ টাকা অর্থদ- বা এক বছরের জেল বা উভয় দন্ড দিতে পারেন।
তবে বর্তমানে বাজার যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়, তাতে এসব শাস্তি অপ্রতুল। তাই শাস্তি বাড়িয়ে ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন করা হচ্ছে। সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন দিক এবং তা অমান্য করা আইনের পরিপন্থি উল্লেখ করে দোকন মালিক সমিতিগুলোকে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সাথে বাজার সমিতিগুলোর দায়দায়িত্ব নিরূপণের বিষয়ে দোকান মালিক সমিতিগুলোকে বাণিজ্য সংগঠনের আওতায় নিবন্ধনের সুপারিশ এসেছে। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সব দোকান মালিক সমিতিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতিটি দোকান মালিক সমিতিকেই জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ ইতিবাচক। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সারাদেশের দোকান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এজন্য প্রতিটি বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ের দোকান মালিক সমিতির অধীনে নিবন্ধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে যে পদ্ধতিতেই হোক, বাজার নিয়ন্ত্রণে দোকানগুলোকে আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে এনে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান পণ্যের সরবরাহ ও দাম নির্ধারণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা কখনও ভোজ্যতেল, কখনও চিনি অথবা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচামরিচ ইত্যাদি পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে অর্থ লুটে নিচ্ছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকার ও ব্যবসায়ীরা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহে ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু এসব ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে।
মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, দোকান মালিক সমিতিগুলোর নিবন্ধন দেওয়া হলে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষেরই লাভ হবে। কারণ ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা হলে সমিতির মাধ্যমে সরকারকে জানাতে পারবে। আবার কেউ যদি অবৈধ কার্যকালাপের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটিকে জবাবদিহির আওতায় আনা যাবে।
আরও পড়ুন
থমথমে ঢাবি ক্যাম্পাস, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বুধবার ঢাবির সকল ক্লাস-পরিক্ষা বন্ধ ঘোষণা
হুইলচেয়ারে করে ভোটকেন্দ্রে এলেন মেঘমল্লার বসু