October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 2nd, 2023, 8:10 pm

উইন্ডিজকে উড়িয়ে ভারতের সিরিজ জয়

অনলাইন ডেস্ক :

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে চওড়া হাসিতে হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, “সত্যি বলতে, অধিনায়ক হিসেবে আমি এই ধরনের ম্যাচগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকি, যেটি স্রেফ একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয়, বরং যেখানে কিছু হারানোর ভয় থাকে।” ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আসলে দেখতে চেয়েছিলেন, সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের চাপে ক্রিকেটাররা কীভাবে মেলে ধরেন নিজেদের। তার দল তা পারল দারুণভাবেই। দাপুটে পারফরম্যান্সে তারা গুঁড়িয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০০ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল ভারত। সেই ২০০৬ সাল থেকে এই নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টানা ১৩টি ওয়ানডে সিরিজ জিতল তারা। আগের দুই ম্যাচে বারবাডোজের দুরূহ উইকেটে ধুঁকেছে দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। শেষ ম্যাচে ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ।

ভারতের ব্যাটসম্যানরাও স্ট্রোকের পসরা সাজিয়ে তোলেন। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও ব্যাটিং গ্রেট ভিরাট কোহলিকে বিশ্রামে রাখা হয় এ দিনও। দলের অন্যরা দেখান ব্যাটিংয়ের জোর। টানা তৃতীয় ফিফটিতে ইশান কিষান ৬৪ বলে করেন ৭৭ রান। টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে সফরে প্রথমবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে শুবমান গিল করেন ৯২ বলে ৮৫। পরে সাঞ্জু স্যামসনের ব্যাট থেকে আসে ৪১ বলে ৫১। পান্ডিয়া অপরাজিত থাকেন ৫২ বলে ৭০ রান করে। ভারত ৫০ ওভারে তোলে ৫ উইকেটে ৩৫১ রান। ক্যারিবিয়ায় যা তাদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস।

রান তাড়ায় নতুন বলে মুকেশ কুমারের তিন ছোবলে ক্যারিবিয়ানরা দিশাহারা হয়ে পড়ে শুরুতেই। পরে তারা পারেনি আর ভালো কিছু করতে। একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থেকে শেষ পর্যন্ত লোয়ার অর্ডারদের লড়াইয়ে কোনোরকমে ১৫১ পর্যন্ত যেতে পারে তারা। টস হেরে ব্যাটিং নামা ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কিষান ও গিল। শুরতে যদিও কাইল মেয়ার্স সুইং বোলিংয়ে কিছুটা পরীক্ষা নেন কিষানের। তবে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই তিনি জবাব দেন। গিলও সাবলিল সূচনা করেন। ১৩.২ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে একশ। ৪৩ বলে কিষান পা রাখেন পঞ্চাশে। ভারতের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে এক সিরিজের তিন ম্যাচেই ফিফটি করলেন তিনি। তার আগে পেরেছেন দিলিপ ভেংসরকার, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও শ্রেয়াস আইয়ার। গিলের ফিফটি আসে ৫১ বলে। ১১৮ বলে ১৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি থামে কিষানের বিদায়ে। ইয়ানিক ক্যারাইয়াহর লেগ স্পিনে কিষান স্টাম্পড হন ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৭ করে।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে রুতুরাজ গায়কোয়াড় (৮) পারেননি সুযোগটি কাজে লাগাতে। তবে স্যামসন ধরে রাখেন দ্রুত রানের ধারা। প্রথম ১৩ বলের মধ্যেই তিনটি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটিতে চার ছক্কায় ৫১ রান করে বিদায় নেন স্যামসন। এরপর ভারতের রানের গতিও কমে যায় অনেকটা। শতরানের কাছে গিয়ে অনেকটা সাবধানী হয়েও শেষ পর্যন্ত মাইলফলকে যেতে পারেননি গিল। তার ১১ চারের ইনিংস থামে ৮৫ রানে। এই সময়টায় ৮ ওভারে রান আসে কেবল ২৩। তবে হার্দিক পান্ডিয়া ও সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ পরে রানের গতিতে দম দেন দারুণভাবে। জুটিতে আসে ৪৯ বলে ৬৫ রান। দুটি করে চার-ছয়ে ৩০ বলে ৩৫ করেন সুরিয়াকুমার।

পান্ডিয়া শুরুতে ২২ বলে করেন ১১ রান। পরের ৩০ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৯ রান। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের ঝড়েই শেষ ৩ ওভারে ৪১ রান তোলে ভারত। তার ৭০ রানের ইনিংসে ছক্কা ৫টি। ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইন আপের জন্য ৩৫২ রান অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে এমনিতেই। তা আরও অসম্ভব হয়ে ওঠে রান তাড়ার শুরুতেই। প্রথম ওভারেই মুকেশ কুমারের বলে বিদায় নেন ব্র্যান্ডন কিং। দ্রুত রান তুলতে পারতেন যিনি, সেই কাইল মেয়ার্স আউট হয়ে যান মুকেশের দ্বিতীয় ওভারে। একটু পরে অধিনায়ক শেই হোপ উইকেট হারান মুকেশের সুইংয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৩ উইকেটে ১৭।

এরপর জেয়দেভ উনাদকাট, শার্দুল ঠাকুর, কুলদিপ ইয়াদাভরাও উইকেট শিকারে যোগ দেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান হয়ে যায় ৮ উইকেটে ৮৮। তিনে নামা আলিক আথানেজ ৩২ রান করতে পারলেও প্রথম সাত ব্যাটসম্যানে আর কেউ দুঅঙ্ক ছুঁতে পারেননি। নবম উইকেটে আলজারি জোসেফ ও গুডাকেশ মোটি ৫৫ রানের জুটি গড়ে দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান। জোসেফ ২ ছক্কায় ২৬ রান করেন। মোটি অপরাজিত থাকেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৯ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে। শেষ ২ উইকেটসহ ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার হয়ে যান শার্দুল ঠাকুর। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং এটি। ম্যাচের সেরা শুবমান গিল, সিরিজ সেরা কিষান। দুই দল এখন খেলবে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ত্রিনিদাদেই প্রথম ম্যাচ বৃহস্পতিবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত : ৫০ ওভারে ৩৫১/৫ (কিষান ৭৭, গিল ৮৫, রুতুরাজ ৮, স্যামসন ৫১, পান্ডিয়া ৭০*, সুরিয়াকুমার ৩৫, জাদেজা ৮*; সিলস ৮-০-৭৫-০, মেয়ার্স ৪-০-২৫-০, জোসেফ ১০-০-৭৭-১, মোটি ১০-১-৩৮-১, শেফার্ড ১০-০-৭৩-২, ক্যারাইয়াহ ৮-০-৫৮-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৫.৩ ওভারে ১৫১ (কিং ০, মেয়ার্স ৪, আথানেজ ৩২, হোপ ৫, কার্টি ৬, হেটমায়ার ৪, শেফার্ড ৮, ক্যারাইয়াহ ১৯, জোসেফ ২৬, মোটি ৩৯*, সিলস ১; মুকেশ ৭-১-৩০-৩, পান্ডিয়া ৪-১-১৩-০, শার্দুল ৬.২-০-৩৭-৪, উনাদকাট ৫-০-১৬-১, কুলদিপ ৮-৩-২৫-২, জাদেজা ৫-১-২৯-০)
ফল: ভারত ২০০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুবমান গিল
ম্যান অব দা সিরিজ: ইশান কিষান