নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশর রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ সড়কই কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এমন চিত্র নতুন নয়। প্রবল বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং অনেক জায়গায় হাঁটু সমান কিংবা তারও বেশি পানিতে সয়লাব হয়ে যায় রাস্তাঘাট। অবিরাম বৃষ্টিতে বিশেষ করে মিরপুর, ধানমন্ডি, রাজারবাগসহ অনেক এলাকা ও অলিগলি রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। অনেক সড়কে ভারি বৃষ্টিতে কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। ফলে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। এই জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না রাজধানীবাসী।
ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ বলছেন, কয়েক মিনিটের ভারি বৃষ্টিতেই অনেক যায়গায় এমনকি ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মানুষকে কাজ কর্মে যেতে হলে নানা ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। রাস্তায় প্রচুর পানি জমে থাকায় রিক্সা ভাড়া ও অন্যান্য যানবাহন যেমন সিএনজির ভাড়াও অনেক বেশি দিতে হয়। সেই সাথে যানবাহন পাওয়া অনেক কষ্ট হয়ে যায়। রাজধানীতে জলাবদ্ধতার নেপথ্যে এর খালগুলোর অবৈধভাবে দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, খাল, জলাধার ও নিম্নাঞ্চল দখল ও ভরাটের কারণে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন নালাগুলোয় দখলদারিত্ব চলছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য চারপাশের নদী ও খালগুলোকে দখলমুক্ত করে নব্যতা ও পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ডিএসসিসির আওতাধীন শ্যামপুর, মান্দা, জিরানী ও কালুনগর- এ চারটি খাল থেকে বর্জ্য ও পলি অপসারণ করে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এ চারটি খালের নকশা, অঙ্কন ও জরিপের কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে এসব খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ ও ভূমি উন্নয়নের লক্ষ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের যৌথ জরিপের তথ্যমতে, খালের সংখ্যা ৪৩। বর্তমানে ২৬টি খাল আছে শুধু তালিকায়, বাস্তবে নেই। ১৩টি খালের প্রস্থ ১০ ফুটের বেশি নয়। জানা যায়, ঢাকা শহরে একসময় ৬৫টি খাল ছিল। সময়ের আবর্তে সরকার, প্রভাবশালী মহল এবং সাধারণ মানুষের অযাচিত অসৎ ব্যবহারে বেশ কিছু খাল অস্তিত্ব হারিয়েছে। তবে অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের ২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানীতে একসময় ৪৪টি খাল ছিল। যার মধ্যে ৩৫টি খাল শুকিয়ে গেছে। অনেক খাল ভরাট করে সড়ক, ড্রেনেজ লাইন করে ফেলা হয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন খাল দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে “ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২৯টি খাল ও একটি পুকুরের সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পর সীমানা পিলার স্থাপন, খাল ও পুকুরের জিআইএস ডাটাবেস তৈরি” শীর্ষক প্রকল্প চলমান রয়েছে। বর্তমানে কল্যাণপুর রেগুলেটরি পুকুর থেকে কাদা অপসারণের কাজ চলছে। ঢাকায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা মোকাবিলায় একটি কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১০৩টি স্থানে এ ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় অল্পতেই পানি জমে যাচ্ছে। অধিকাংশ রাস্তাই মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের অনুপযোগী। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। জলাশয় ও ডোবা বৃষ্টির পানির আঁধার হিসেবে কাজ করে থাকে।
অবৈধভাবে অনেক জলাশয় ভরে সেখানে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল করা হয়েছে। কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লা-আবর্জনায় নর্দমা ও প্রাকৃতিক খাল ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি প্রবাহের ক্ষমতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত মূল বুড়িগঙ্গা খালটি প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। ম্যাটাডোর বলপেন, পান্না ব্যাটারির মতো অনেক বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে এটি খুব সংকীর্ণ একটি খালে পরিণত হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশে প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাাদক ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান জানান, ‘যেখানে আদর্শগতভাবে একটি শহরের ২৫ শতাংশ সবুজ থাকার কথা, ১৫ শতাংশ জলাশয় থাকার কথা ঢাকায় তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তাহলে বেসিক স্ট্র্যাকচারের গ-গোলটা তো থেকেই যাচ্ছে।’ তিন আরও বলেন, ‘মেয়ররা যখন বারবার করে বলছিলেন যে জলাবদ্ধতা থাকবে না, তখন আমরাও বারবার বলেছি যে, তারা হয়তো কিছু কাজ করেছেন, তাতে তাদের সন্তুষ্টি থাকতে পারে। কিন্তু বৃষ্টি হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না-এই বাস্তবতা থেকে ঢাকা অনেক দূরে।’
আরও পড়ুন
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ সরাসরি সম্প্রচার
কুলাউড়া পৌরসভার ৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
কুলাউড়ার জুনেলকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ আদালতের