রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে আকস্মিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার থেকে ভাঙন শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ২০ মিটার এলাকা ভাঙনে ধ্বসে গেছে।
এসময় একটি জামগাছ, একটি আমগাছ, একটি বটগাছ ও টিউবওয়েল ছিল তাও পদ্মা নদীতে ধ্বসে গেছে।
এছাড়া আশপাশ এলাকায় অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে দেখা যায়, ৬ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন স্থানীয় বারেক মৃধার মুদিখানা দোকান ও পেছনে তার বাড়ি। তার দোকানের সামনে এক পাশে বিআইডব্লিউটিএর অব্যবহৃত পন্টুন নোঙর করে রাখা, অন্য পাশে রয়েছে ৬ নম্বর ফেরিঘাট।
বেশ এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় গত বন্যায় ভাঙন রোধে ফেলানো বালুভর্তি জিওব্যাগসহ ধ্বসে পড়ছে। স্থানীয় কয়েকজন ভাঙনস্থানে রাস্তার উপরে থাকা বালুভর্তি কিছু জিওব্যাগ ফেলার চেষ্টা করেন।
এছাড়া প্রায় ৩০ ফুট এলাকা জুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের সকলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী।
স্থানীয় সিদ্দিক কাজী পাড়ার বাসিন্দা ও মুদি দোকানী বারেক মৃধা বলেন, রবিবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ বিকট আকারে শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। স্থানীয় অনেকের সঙ্গে ভয়ে দৌড়ে নদীর পাড়ে এসে দেখি আমার দোকানের সামনের বিশাল অংশজুড়ে পদ্মায় ধ্বসে গেছে। পাশেই ৬ নম্বর ফেরি ঘাটও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বালুভর্তি জিওব্যাগ ধ্বসে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, নদী থেকে মাত্র ৮-১০ হাত দূরে আমার দোকান। দোকানের সামনে অনেক জায়গাজুড়ে ফাটল নিয়ে বিকালে আরও ভেঙে যায়। এসময় তিনটি গাছসহ টিউবওয়েল ধ্বসে নদীতে যায়।
তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দোকান, বাড়িঘর কিছুই থাকবে না।
পদ্মার পাড়ের আরেক বাসিন্দা সরোয়ার মোল্যা বলেন, সকালে ভিড় দেখে দ্রুত নদীর পাড়ে এসে দেখি প্রায় ৫০ ফুটের বেশি এলাকা ভেঙে গেছে। আমরা চাই, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীর পাড়ের মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের বসতভিটা কিছুই থাকবে না।
ফেরি ঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী চান্দু মোল্যা বলেন, রবিবার তিন দফা ভেঙেছে। বারেক মৃধার দোকানের সামান্য সামনে নদীর পাড়ে একটি বড় জাম গাছ, একটি আম গাছ, একটি বট গাছ ও টিউবওয়েল ছিল। বেলা ২টার পর পরই তাও ধ্বসে নদীতে চলে গেছে।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে দৌলতদিয়ায় নদী শাসনের দাবি জানিয়ে আসছি। অথচ কেউ কথা শুনছে না, কাজও হচ্ছে না। প্রতি বছর বর্ষাকালে নেতারা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ব্যবসা করে। বর্ষা শেষ হলে আর কারো খবর থাকে না। সরকারের কাছে খাবার চাই না, নদী শাসন চাই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দৌলতদিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ২০ মিটার এলাকা ধ্বসে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আমাদের আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
ভাঙন পরিস্থিতি দেখার পর বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ছবি তুলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা পেলে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার নাজিরগঞ্জ ও ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাট ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে আমরা সেখানে ব্যস্ত থাকায় একটু দেরি হচ্ছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
১৫০০-২০০০ ব্যক্তি ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুট করে: হাইকোর্টে প্রতিবেদন
বিকেলে ব্যাংকে ঢুকে লুকিয়ে ছিল, রাতে ডাকাতির চেষ্টা
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে লতিফ সিদ্দিকী