তিনদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কপোতাক্ষের ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে খুলনার পাইকগাছার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে মুজিব শত বর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন বহু পরিবারের পুনর্বাসনে গড়া আবাসন প্রকল্পসহ হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে ইতোমধ্যে বসতবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, প্রথমে আগ্রাসী কপোতাক্ষের ভাঙন ও পরে নাব্যতা হ্রাসে নদী তীরে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভিটা হারিয়ে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়। এরপর গণদাবির প্রেক্ষিতে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন করে।
তবে গত তিনদিনের কপোতাক্ষের ফের ভাঙনে নতুন করে উদ্বাস্তু হচ্ছে নদী তীরে বসবাসকারী বহু পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের বহু উন্নয়ন প্রকল্প।
ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর হাট-বাজারসহ তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন (সি আর এম আই ডিপি) প্রকল্প চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
কপোতাক্ষ পাড়ের বনায়ন প্রকল্পের ইতোমধ্যে কপোতাক্ষে চলে গেছে। বর্তমানে কপিলমুনির নতুন মাছ কাটা থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ী ঘাট, হাট-বাজার, কাশিমনগর জেলেপাড়া, গোলাবাটিসহ রাড়ুলী ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের ভাঙন ফের ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সেখানকার জেলে পল্লীর ৭০টি পরিবার ভাঙনের মুখে অন্যত্র চলে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ২০টি পরিবারের বসত ভিটা। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সেখানকার চলাচলের একমাত্র রাস্তার দুই তৃতীয়াংশ।
জোয়ারের পানি ঠেকানোর কোনো বাঁধও নেই। ফলে প্রতি অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারে পানি বাড়লে এলাকায় লবণ পানিতে প্লাবিত হয়ে গাছপালা, ফসলি জমি ও কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে বোয়ালিয়া জেলে পাড়া, রামনাথপুরসহ কপোতাক্ষের বিভিন্ন এলাকা।
এ ব্যাপারে কপিলমুনির কাশিমনগর জেলে পল্লীর বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস জানান, এক শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছেন। তবে ইতোমধ্যে তাদেরসহ বহু পরিবারের মূল বসতভিটা কপোতাক্ষ চলে গেছে। তার নিজেরও দু’বার বসতি বদল হয়েছে।
বারিক মোড়ল বলেন, ভাঙনের মুখে তিনি অন্তত তিনবার ঘর পরিবর্তন করেছেন। সঙ্গতি না থাকায় অন্যত্র জমি কিনে বসবাসেরও উপায় নেই অন্যদিকে সরকারও নদী ভাঙন রোধে কার্যত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে তাদের দাবি, নদীর অপর পাড়ে গড়ে ওঠা চরে বসতির সরকারি অনুমতি।
রাড়ুলীর বাসিন্দা প্রভাষক ময়েজুর রহমান জানান, গতকাল রাড়ুলী ইউনিয়নের প্রবেশদ্বারের পুরাতন ওয়াপদা রাস্তায় নতুন করে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সেখান থেকে নদীর পানি প্রবেশ করছে। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে স্বেচ্ছাশ্রমে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধটি আশু মেরামত করেছেন।
এর আগে বাঁধটি ২০০৯ সালে আইলায় ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধটির স্থায়ী সংস্কার না হলে সেখানে ভাঙন প্রসারতা বৃদ্ধি পেয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তিনি।
কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, রামনাথপুর, আগড়ঘাটা, ভেদামারীসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙনে সেখানকার বসতিসহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হলেও সেখানকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যত কোনো সরকার এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে তারা যতটুকু সম্ভব কাজ করেছেন। তবে আগামীতে এ ব্যাপারে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বিল গেটস হঠাৎ কেন পরিবহন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলেন
কোম্পানীগঞ্জে বিলুপ্ত পথে খেজুর গাছ ও রস!
প্রিপেইড মিটার বন্ধের দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন