নিজস্ব প্রতিবেদক:
তারল্য টানে দেশের ব্যাংকগুলো। চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচুর ডলার বিক্রি করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা চলে যাচ্ছে। আর তাতেই ব্যাংকগুলোর টাকার তারল্যে টান পড়েছে। তাছাড়া বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমছে। ফলে নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে অনেক ব্যাংকই কলমানির পাশাপাশি এখন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মাসখানেক আগেও কলমানিতে ধার দেয়া অনেক ব্যাংক এখন নিয়মিত টাকা ধার করছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ আরো কিছু ব্যাংক আন্তঃব্যাংক কলমানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও প্রতিনিয়ত ধার করছে। কারণ ওসব ব্যাংককে বর্তমানে তুলনামূলক বেশি এলসি খুলতে হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিদিনই কলমানি ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার হয়েছে। আর ওই সময় রপ্তানি আয় ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে। রপ্তানি আয় অনেক বাড়লেও আমদানির সঙ্গে ব্যবধান বেড়েছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। একই সময়ে আবার রেমিট্যান্স ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারে নেমেছে। তাতে চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে উঠেছে। আগের অর্থবছর যেখানে ঘাটতি ছিল মাত্র ৪৫৮ কোটি ডলার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমদানি কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। তার বিপরীতে ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে। গত অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢোকে। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক ৭৯৩ কোটি ডলার কিনেছিল। তখন ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে তখন বাজারে তারল্যে ভরপুর ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির ফলে একদিকে টাকার তারল্যে টান পড়েছে, আরেক দিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা তীব্র থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ডলারের দর ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বশেষ ৯৪ টাকা ৭০ পয়সায় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে ডলারের দর অনেক বেশি হারে বেড়েছে। অবশ্য জুলাই মাসে এলসি খোলার হার কমেছে। রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। রেমিট্যান্সও বেড়েছে ১৪ শতাংশের মতো। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা করা হচ্ছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়া এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমে আসবে। তখন টাকার ওপরও চাপ কমে যাবে।
সূত্র আরো জানায়, ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে গত মে শেষে ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বরে যা ২ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ছিল। আর গত বছরের জুনে ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং বিভিন্ন পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে যা ছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর শেষে ছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য সাম্প্রতিক ঋণ বৃদ্ধির মানে যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, তেমন নয়। মূলত বেশিরভাগ পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির ফলে আটকে যাচ্ছে টাকা। তাতে তারল্যের ওপর টান পড়ছে। তবে ব্যাংকে ঋণযোগ্য তহবিলে কোনো সংকট নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে তারল্য বাড়াতে ইতোমধ্যে সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। সেখান থেকে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ শতাংশ সুদে অর্থায়ন নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। গম ও ভুট্টা উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে আরো একটি পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-মেয়ে
কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ দিয়ে যা বললেন তারেক রহমান
শীতের সবজির বাজারে স্বস্তি, কমেছে পেঁয়াজ,ডিম-মুরগির দামও