নিজস্ব প্রতিবেদক:
তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় ইতোমধ্যে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। মূলত চলমান ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। ফলে বিপিসির কাছে তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আর দ্রুত ওই পাওনা পরিশোধে বিপিসিকে চাপ দিচ্ছে ওসব কোম্পানি। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বকেয়া বিলের কারণে বিদেশি দুই কোম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে। সঙ্কটে পড়বে পরিবহন খাত, জটিলতা তৈরি হবে কৃষকের সেচকাজেও। বকেয়া পরিশোধ করা না হলে দুটি প্রতিষ্ঠান তেল ছাড়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। বিষয়টি বিপিসির পক্ষ থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৬টি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া ও চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক- ওই দুটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বছরের প্রথমার্ধে ১.৬ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করার একটি দরপত্র পায়। তেল সরবরাহের পর ভিটল এশিয়া বিপিসির কাছে ১৫২.৬০ মিলিয়ন ডলার পাওনা থাকে। পরে প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৮ ও ১০ আগস্ট ই-মেইলে বিপিসিকে জানায়, বকেয়া পরিশোধ না করলে তারা বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহ করবে না। একই সঙ্গে তারা বিলম্ব পরিশোধের সুদও দাবি করে। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিটল এশিয়ার কর্মকর্তারা বিপিসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ভিটল এশিয়াকে ইতোমধ্যে ৩০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। একইভাবে একইভাবে চীনা সিনোপেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক বিপিসির কাছে পায় ১২৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনার বিষয়ে বিপিসিকে চিঠি দেয়। এরপর গত ৪ মার্চ ইউনিপেকের একটি ডিজেলবোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় জাহাজটি থেকে ডিজেল খালাস করতে দেয়া হয়নি। পরদিন ৫ মার্চ বিপিসি ইউনিপেককে ৬২.২৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। পরে বন্দর থেকে কার্গোটি ছেড়ে দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। তার মধ্যে বছরে শুধু ডিজেলই ৪০ লাখ টন আমদানি হয়। দেশে পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি যানবাহন জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতারও ৩৪ শতাংশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করে। আগেও বিপিসি বিভিন্ন সময়ে পাওনা পরিশোধে ডলার সংকটে পড়েছে। কিন্তু বিপিসি বিদেশী কোম্পানির কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে সামনে বড় ধরনের সংকট বা পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কায় থাকবে দেশ।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, ডলারের কারণে পেমেন্ট দেরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে পেমেন্ট করা হচ্ছে। মূলত নিয়মিত পেমেন্ট দিতে না পারলে সরবরাহ কোম্পানিগুলো মাঝে মাঝে নানা রকম মন্তব্য করেন। তবে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যা করার তারা সেটি করে থাকে। এবারও সরবরাহে কোনো রকম সমস্যা তারা করবে না। এ বি এম আজাদ বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তেল সরবরাহের ৩০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেমেন্ট দিতে না পারলে তারা অনেক সময় চুক্তি অনুযায়ী বিলম্বে পরিশোধের সুদও দাবি করেন।’ ভিটল এশিয়া ও ইউনিপেক ছাড়াও বিপিসির এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কম্পানি, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি জাপিন, পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের কাছ থেকে ৪.৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ ফের বাড়লো
মুখ-গলার যে লক্ষণ ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭ রোগী