অনলাইন ডেস্ক :
দেখতে দেখতে এসে গেল আরেকটি বিশ্বকাপ। এবারে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করছে ভারত। ভারতজুড়ে ১০টি ভিন্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ৪৮টি ম্যাচ। ৫ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে শুরু ব্যাট-বলের এই রোমাঞ্চের। ১৯ নভেম্বর নতুনভাবে নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই স্টেডিয়ামে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে ২০২৩ বিশ্বকাপের। এই আসর উপলক্ষে নতুনভাবে সেজেছে ক্রিকেট মাঠগুলো। একনজরে চোখ বোলানো যাক ভারত বিশ্বকাপের এই স্টেডিয়ামগুলোয়।
৮ শহরের ১০ স্টেডিয়াম পুরো নাম
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ দর্শক ধারণক্ষমতা : ১,৩২,০০০ বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম।
ভারতের পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের সবচেয়ে বড় শহর আহমেদাবাদে অবস্থিত এই মাঠ। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নরেন্দ্র মোদির নামানুসারে নামকরণ করা হয় নতুনভাবে তৈরি এই স্টেডিয়ামের। এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা এক লাখ ৩২ হাজার, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ২০২৩ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ, ফাইনাল, ভারত-পাকিস্তান রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের রোমাঞ্চকর ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মাঠে। ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা দর্শক ধারণক্ষমতা : ৬৬,০০০ ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘মক্কা’। ১৫৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠ দেশটির সবচেয়ে পুরনো এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্টেডিয়াম। দর্শক ধারণক্ষমতায় ভারতের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মাঠ ইডেন। ১৯৮৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ সালের ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ফাইনালের আয়োজক ছিল পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম। নোরল্যান্ডস ও পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচ দুটি এই মাঠেই খেলবে বাংলাদেশে।
১৬ নভেম্বর দ্বিতীয় সেমিফাইনালেরও আয়োজক ইডেন গার্ডেনস।
এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু দর্শক ধারণক্ষমতা : ৪০,০০০ কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট ল এবং আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হোম মাঠ এটি। বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এম চিন্নাস্বামী মুাইলিয়ারের নামে নামকরণ করা হয় ৫৪ বছরের পুরনো এই মাঠের। ১৯৭৪ সালে এটি আয়োজন করে টেস্ট ম্যাচ। ভারত আয়োজক থাকার সময় প্রতিটি বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে। অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান, ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা, ভারত-নেদারল্যান্ডসসহ গ্রুপ পর্বের মোট পাঁচটি ম্যাচ আয়োজন করবে বেঙ্গালুরুর এই স্টেডিয়াম।
এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম, চেন্নাই দর্শক ধারণক্ষমতা : ৫০,০০০ তামিলনাড়ু রাজ্যের এই মাঠ চীপক স্টেডিয়াম নামেও সুপরিচিত। বয়সের দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় পুরনো মাঠ এটি। আইপিএলের অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের হোম মাঠ এটি। ১৩ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই মাঠে খেলবেন সাকিব আল হাসানরা। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার হাইভোল্টেজ ম্যাচটিও আয়োজন করবে চেন্নাইয়ের এই মাঠ। এ ছাড়া পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাসহ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম ২০২৩ বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচের আয়োজক।
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, দিল্লি দর্শক ধারণক্ষমতা : ৪১,৮৪২ নয়াদিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর রোডে অবস্থিত ভারতের অন্যতম ব্যস্ততম স্টেডিয়াম। কোটলা ফোর্টের নামানুসারে এর নাম ছিল ফিরোজ শাহ কোটলা। ২০১৯ সালে প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাঠের নতুন নামকরণ করা হয়। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ সালেও ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। ৬ নভেম্বর এ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলবেন সাকিব আল হাসানরা। এই মাঠে গ্রুপ পর্বের পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম দর্শক ধারণক্ষমতা : ২৩,০০০ হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় অবস্থিত নান্দনিক এক ক্রিকেট মাঠ। বিশ্বের সেরা দৃষ্টিনন্দন মাঠের অন্যতম। আইপিএলের ল কিংস একাশ পাঞ্জাবের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে আইপিএলের কিছু ম্যাচও হয়েছে এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে। ৭ অক্টোবর এই মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। তিন দিন পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটির স্বাগতিকও এইচপিসিএ। সব মিলিয়ে এই মাঠের জন্যও বরাদ্দ ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচ।
রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হায়দরাবাদ দর্শক ধারণক্ষমতা : ৫৫,০০০ ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীর নামে হয়েছে এর নামকরণ। আইপিএলের ল সানরাইজার্স হায়রাবাদের হোম গ্রাউন্ড। তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ১৫টি ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই মাঠের জন্যই সবচেয়ে কম বরাদ্দ। মোটে তিনটি ম্যাচ হবে হায়দরাবাদের এই মাঠে। ৬ অক্টোবর পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডস, ৯ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস এবং পরের দিন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে তেলেঙ্গানা রাজ্যে অবস্থিত রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে।
ভারতরত্ন অটল বিহারি বাজপেয়ি (বিআরএসএবিভি) ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, লখনউ দর্শক ধারণক্ষমতা : ৫৫,০০০ র্শক ধারণক্ষমতায় ভারতের পঞ্চম বৃহৎ মাঠ। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ির নামে নামকরণের আগে এটি পরিচিত ছিল ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নামে। লখনউয়ের এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কয়েকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ। ১২ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-ক্ষিণ আফ্রিকা, ১৬ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, ২৯ অক্টোবর আয়োজক ভারত মুখোমুখি হবে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্কিয়ন ইংল্যান্ডের। এ ছাড়া ২১ অক্টোবর নেদারল্যান্ডস-শ্রীলঙ্কা, ৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে আফগানিস্তান।
ওয়াংখেড়ে ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মুম্বাই দর্শক ধারণক্ষমতা : ৩২,০০০ আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হোম গ্রাউন্ড ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদর প্তরও এখানে অবস্থিত। শচীন টেন্ডুলকারের শহরের মাঠ ওয়াংখেড়েতেই ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথম শে হিসেবে দেশের মাটিতে বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতেছিল ভারত। টেন্ডুলকারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। ওয়াংখেড়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে সাকিবরা। ১৫ নভেম্বর প্রথম সেমিফাইনালসহ এই মাঠের জন্য বরাদ্দ পাঁচ ম্যাচ।
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, পুনে দর্শক ধারণক্ষমতা : ৩৭,৪০৬ বিশ্বকাপের ১০ মাঠের মধ্যে সবচেয়ে নতুন স্টেডিয়াম। এক শক আগে ২০১২ সালে উদ্বোধন হয় মহারাষ্ট্র স্টেডিয়ামের। ১৯ অক্টোবর এবারের স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে এবং ১১ নভেম্বর পাঁচবারের চ্যাম্কিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই মাঠেই খেলবে সাকিব আল হাসানের ল। এ ছাড়া ৩০ অক্টোবর আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ১ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, ৮ নভেম্বর ইংল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পুনেতে।
আরও পড়ুন
চমক দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা, বাদ সাকিব-লিটন
স্বপ্ন পূরণের ‘প্রেরণাদাতা ও যোদ্ধা’ তামিম বললো: বিসিবি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন তামিম ইকবাল