জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
অবৈধ পথে আসা ভারতীয় চিনিতে সয়লাব সিলেটের বাজার। টনের পর টন চিনি এবং চোরাকারবারিকে আটকের পরও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না চিনির চোরাচালান। ভারতীয় চিনির দৌরাত্ম্যে দেশে উৎপাদিত চিনি বাজার হারাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।সিলেটের পাইকারি বাজার কালীঘাটেই প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনা-বেচা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দেশীয় নানা কোম্পানির স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে এসব চিনি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, জেলার জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য প্রবেশ করে সিলেটে। সীমান্ত এলাকার অন্তত এক হাজার চোরাকারবারি এই কাজে জড়িত। প্রায়ই চোরাই চিনি আটকের খবর পাওয়া গেলেও পাচারের পরিমাণের তুলনায় তা খুবই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, কখনো বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে, কখনও বা বিশেষ ব্যবস্থায় চোরাই পণ্য প্রবেশ করে। আর এই বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে, ম্যানেজ সিস্টেম। এর সাথে একটি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী এবং প্রতিটি থানা এলাকায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মোটা অঙ্কের “বখরা” দিয়ে চোরাকারবারিরা তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র।
জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, গত ১ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ১ হাজার ৪৩১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বস্তায় ৭১ হাজার ৪৯ কেজি চিনি ছিল। এসব ঘটনায় ২৩টি মামলা হয় এবং পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বস্তার পর বস্তা সারি সারি রাখা। দেখলে মনে হবে কোনো গুদামের ছবি। বাস্তবে ভারতীয় চিনিভর্তি বস্তাগুলো সিলেট কোতোয়ালি থানায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভারত থেকে চোরাইপথে চিনি এনে দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের চিনির বস্তায় ভরে বাজারজাত করছেন চোরাকারবারিরা। থানায় আটক হওয়া এমন বস্তায় ভরা ভারতীয় চিনিও আটকের তালিকায় পাওয়া গেলো।
এসএমপির উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, সিলেট মহানগর পুলিশের হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অবৈধ পথে আসা ১৪৪ মেট্রিক টন চিনি জব্দ করা হয়। এ সময়ে ৫০টি মামলা এবং ৮২ চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জেলার জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য সিলেটে প্রবেশ করে বলে জানান এসএমপির উপকমিশনার।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শুধু চলতি মাসের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত জেলার ৮ থানা এলাকা থেকে ৭৯ মেট্রিক টন চিনি জব্দ এবং ৬২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জব্দ করা চিনি আদালতের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে প্রচুর চিনি দেশে প্রবেশ করছে।
দেশে চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ডিলার হাবিবুর রহমান জানান, এভাবে অবৈধ পথে ভারতীয় চিনিতে সিলেটের বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় দেশীয় নামকরা প্রতিষ্ঠাগুলোতে উৎপাদিত চিনি বাজার হারাচ্ছে।
বিজিবি সিলেট সেক্টরের আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি ব্যাটালিয়নের সীমান্ত এলাকায় গত ১ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ২১০ মেট্রিক টন ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
রেমিট্যান্স আহরণে ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেলো ইসলামী ব্যাংক
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও ৪৩ টি পণ্যের শুল্কহার বৃদ্ধি নিয়ে ঢাকা চেম্বারের উদ্বেগ
২০২৪ সালে ৪০ কোটি টাকার বীমাদাবি প্রদান করলো প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স