যুক্তরাষ্ট্র অফিস:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউন শুরুর পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিউইয়র্কের কর্মব্যস্ত অনেক এলাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নথিপত্রহীন অভিবাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে। অনেকেই কাজে যাচ্ছেন না। ফলে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারিতে কাজের লোকের অভাব দেখা দিয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং প্রতিদিন বিকাল হলে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা কুইন্স, ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কস বরোর বিভিন্ন এলাকায় ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর এসব এলাকায় আড্ডা অনেকাংশে কমে গেছে। এমনকী এসব এলাকার ফুটপাতে বিভিন্ন দোকানপাট ছিল, তা আর দেখা যাচ্ছে না।
নিউইয়র্কের স্প্যানিশ অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস ও রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ এলাকায় সাইডওয়ার্ক দিয়ে হাঁটা যেত না। ফুটপাত ছিল অবৈধ ববসায়ীদের দখলে। পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য থাকতো। কিন্তু গত দুদিন ধরে এসব এলাকা এক প্রকার ফাঁকা। এই এলাকার দোকানপাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ছে না।
রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ এবং ৮২ স্ট্রিটের একজন ব্যবসায়ী জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তার দোকানে বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। সবার ভেতর এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানান, তাদের রেস্টুরেন্টে কর্মীরা গত এক সপ্তাহ ধরে কাজে আসছে না। কেউ ফোনও ধরছে না। তিনি বলেন, এখন লোকের অভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টের কর্ণধার ঠিকানাকে বলেন, তার রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ কর্মী বাংলাদেশি স্টুডেন্ট। কিন্তু ধরপাকড়ের খবরে তারা আতঙ্কিত হয়ে আর কাজে আসছেন না। ফলে তিনি অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন।
জ্যামাইকায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি গ্রোসারি মালিক এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের গ্রোসারিতে ভারী কাজের জন্য স্প্যানিশরা ছিল। কিন্তু ধরপাকড়ের ভয়ে তারা অনুপস্থিত। এ কারণে নিজেই কাজ করছেন।
একটি সূত্র জানায়, গত তিন-চার বছরে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, যাদের বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। তারা স্বল্প বেতনে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারিতে কাজ করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন।
এদিকে নিউইয়র্ক স্যাঙ্কুয়ারি সিটি হলেও অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় বন্ধ নেই। গত তিন দিনে বিপুলসংখ্যক মাুনষকে সিটির বিভিন্ন বরো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে নিউইয়র্ক সিটিতে অভিযান পরিচালনার সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম উপস্থিত ছিলেন। শনিবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর নোম মঙ্গলবার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যায় এজেন্টরা নিউইয়র্ক সিটির একটি অজানা স্থানে একজন ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নোম তার পোস্টে লেখেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) অভিযান শুরু করেছেন। অপহরণ, হামলা এবং চুরির অভিযোগ থাকা এক অপরাধী বিদেশিকে আটক করা হয়েছে। ধন্যবাদ আইসিই। এ ধরনের অপরাধীদের রাস্তায় আর থাকতে দেওয়া হবে না।’
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানিয়েছে, তারা নিউইয়র্কের এফবিআই অফিস এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থার সাথে একত্রে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন এবং অপরাধী বিদেশিদের সম্প্রদায় থেকে সরিয়ে জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায়’ উন্নত লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান শুরু করেছে।
ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ) সামাজিক মাধ্যমে অভিযানের একটি ছবি শেয়ার করেছে এবং জানিয়েছে যে অভিযানের ফলে অপহরণ, হামলা এবং চুরির অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।আইসিই প্রতিদিন তাদের গ্রেপ্তার সংখ্যার আপডেট শেয়ার করছে। সোমবার আইসিই ১ হাজার ১৭৯টি গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে।
নোমের নিউ ইয়র্ক সিটিতে উপস্থিতি এজেন্সির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই হলো। এজেন্সিটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং গণপ্রত্যাবাসনের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
গত সপ্তাহে অফিস গ্রহণের পর থেকে, ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে: শরণার্থী ভর্তি প্রোগ্রাম বন্ধ করা, জন্মগত নাগরিকত্বের সমাপ্তি এবং কিছু কার্টেলকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনীত করা।
আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা দেবে কানাডা
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সহযোগিতা চেয়েছে রাশিয়া