কয়েক সপ্তাহ ধরে ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চলমান জোরালো গুঞ্জনের পর অবশেষে তাকে দেখার অনুমতি পেল তার পরিবার। দুর্নীতির মামলায় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন তার বোন ডা. উজমা খান।
পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতাদের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইমরান খানের সঙ্গে তার বোনের সাক্ষাতের জন্য সরকার আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে।
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয় এবং সেগুলোর বেশ কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তবে ইমরান খানের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক।
তোশাখানা থেকে সরকারি উপহার অবৈধভাবে বিক্রি করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় প্রথম সাজা পান ইমরান খান। পরবর্তী রায়ে তার দণ্ড আরও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে কূটনৈতিক নথি ফাঁস মামলায় ১০ বছর এবং আল-কাদির ট্রাস্ট–সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে ১৪ বছরের কারাদণ্ড অন্তর্ভুক্ত। প্রসিকিউটরদের দাবি, ট্রাস্টের নাম ব্যবহার করে তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ভূমি বরাদ্দ নিয়েছেন।
পিটিআইয়ের অভিযোগ, এসব মামলা ইমরান খানকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই করা হয়েছে। গত মাসে ইমরানের তিন বোন—নোরীন নিয়াজি, আলিমা খান ও উজমা খান—তাকে দেখতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপমানিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
এর পর থেকেই ইমরানের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে—এমন আশঙ্কা বাড়তে থাকে দলের নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে যে কারাগারেই মারা গেছেন ইমরান খান। টানা ২৫ দিন কারও সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি না পাওয়ায় এই গুজব আরও জোরালো হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে—এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি গোপন করার চেষ্টা করছে।
গুজবের সূত্রপাত আফগানিস্তানভিত্তিক কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে। বর্তমানে সীমান্ত নিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায় এই বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।
এদিকে এসব পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, ইমরান খান জীবিত আছেন—এমন প্রমাণ দেখাতে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ইমরান খান সুস্থ আছেন এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গত রোববার পিটিআইয়ের সিনেটর খুররম জিশানের একটি মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে। তিনি অভিযোগ করেন, ইমরান খানকে একক কক্ষে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে তিনি বলেন, ইমরানের জনপ্রিয়তাই সরকারের ভয়; তাই তার কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে না।
বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের বয়স এখন ৭২। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাবন্দী।
মঙ্গলবার তার বোনের সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ার আগেই ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভে নামেন পিটিআই নেতাকর্মীরা। তারা দেশে ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানান। তবে বড় সমাবেশ ঠেকাতে পাকিস্তান সরকার ইতোমধ্যে জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সূত্র: ডন, পিটিআই।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
অনেকের শাসন দেখেছেন, এবার ইসলামপন্থীদের সুযোগ দিন: চরমোনাই পীর
১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা
খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: ফখরুল