December 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 10th, 2025, 5:49 pm

৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

 

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের ‘৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের’ অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা–১ এ মামলাটি করেন। মামলায় আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলেসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তার দুই ছেলে হলেন—বসুন্ধরা ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত সোবহান এবং একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাফিয়াত সোবহান।

দুদকের তালিকা অনুযায়ী অন্য আসামিরা হলেন: ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক মনোয়ারা শিকদার, পারভীন হক শিকদার, মোয়াজ্জেম হোসেন, রিক হক শিকদার, রন হক শিকদার, মো. আনোয়ার হোসেন এবং একে এম এনামুল হক শামীম; ব্যাংকটির ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসিনা সুলতানা; সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার আরিফ মো. শহিদুল হক; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্রেডিট ইন–চার্জ আনিসুল হক; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতানা পারভিন; সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সুবল চন্দ্র রায় এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ কামরুল হাসান মিঠু।

মামলাটি দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ব্যাংকের প্রচলিত বিধি–বিধান লঙ্ঘন করে এবং ঋণের শর্ত পূরণ না করেই বসুন্ধরা ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড-এর পক্ষে ৬০০ কোটি টাকা ‘ফান্ডেড’ এবং ৭৫০ কোটি টাকা ‘নন–ফান্ডেড’—সর্বমোট ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেন।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, পরবর্তীতে বিতরণ করা ফান্ডেড ঋণের ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করে পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা অর্থ আত্মসাৎ করেন।

‘আত্মসাৎ করা টাকার অবৈধ উৎস, অবস্থান ও মালিকানা গোপন’ করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখা থেকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা হয়।

এছাড়া এই অর্থের একটি অংশ রংধনু বিল্ডার্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে ঋণ সমন্বয় ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, এসব ঘটনা ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা।

এই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী–সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তর, অর্থ পাচার’-এর অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলবও করা হয়।

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বসুন্ধরাসহ পাঁচটি বড় কোম্পানির মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে তাদের লেনদেনের তথ্য চায়।

পরে ২০২৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আহমেদ আকবর সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়।

একই মাসে দুদকের আবেদনের পর আদালত আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এনএনবাংলা/